16.2 C
London
October 11, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিরতি কার্যকর, দলে দলে বাড়ি ফিরছে গাজার মানুষ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টার দিকে ইসরাইলি সেনারা জনবহুল এলাকা থেকে সরে যায়। এর পর থেকেই দলে দলে বাস্তুচ্যুত মানুষ নিজেদের বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেছে। উপকূলবর্তী সড়কগুলোতে দেখা গেছে মানুষের ঢল।

গাজার উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ আল-রশিদ সড়কে রাতভর অপেক্ষা করার পর সেনা প্রত্যাহারের খবর পেয়ে বাড়ির দিকে অগ্রসর হন। তবে গাজার ৫৩ শতাংশ এলাকা, বিশেষত সীমান্তবর্তী বাফার জোন, রাফা, খান ইউনিস, বেঈত হানুন ও ফিলাডেলফি করিডর এখনো ইসরাইলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আইডিএফ সতর্ক করেছে, এসব এলাকায় প্রবেশ করা বিপজ্জনক হতে পারে।

এদিকে হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল-হায়া এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে তারা যুদ্ধের ‘সম্পূর্ণ সমাপ্তি’র নিশ্চয়তা পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনে দেশি-বিদেশি সংস্থা ও রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে একযোগে কাজ করবে হামাস। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও স্থিতিশীলতা আনতে ২০০ সেনার একটি যৌথ টাস্কফোর্সে অংশ নেবে তারা। তবে মার্কিন সেনারা গাজার ভেতরে মোতায়েন হবে না। টাস্কফোর্সে থাকবে মিশর, কাতার, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিরাও।

জানা গেছে, এই যুদ্ধবিরতি এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায়। তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ইসরাইল ও হামাসের পাশাপাশি মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরাইল সেনা প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং বন্দি-জিম্মি বিনিময় শুরু করবে। হামাস মুক্তি দেবে ২০ জীবিত জিম্মি ও ২৮ মরদেহ, আর ইসরাইল ছাড়বে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ইতিমধ্যেই ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরো প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজায় এখন মানুষ আশায় বুক বাঁধছে—যুদ্ধ থেমে অবশেষে শান্তি ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে তারা।

বাড়িঘর ধ্বংস হলেও মনে আনন্দ :গাজায় যুদ্ধবিরতির পর হাজারো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শুক্রবার ফিরে গেলেন তাদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘরে। কয়েক বছর ধরে তাঁবু ও আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপনের পর নিজ ভূমিতে পা রাখার আনন্দে ভরপুর হয়ে ওঠে তাদের মুখ। সামনের দিনগুলোতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিত্সাসহ সকল মৌলিক প্রয়োজনগুলোই গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে। তবুও নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে পেরেছে। মাঝরাতে আকাশ থেকে আর নেমে আসবে না ক্ষেপণাস্ত্র। এটা ভাবনাই তাদের বেশি আনন্দ দিচ্ছে। গতকাল উপকূলীয় সড়ক ধরে দীর্ঘ সারিতে মানুষ পায়ে হেঁটে এগিয়ে যান গাজা নগরীর দিকে। কেউ কাঁধে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস বহন করছেন, কেউ আবার ভাঙা কাঠ বা পুরোনো মালপত্র কুড়িয়ে নিচ্ছেন।

৪০ বছরের ইসমাইল যায়েদা বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমার ঘরটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আশপাশের সব ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো এলাকার রূপটাই পাল্টে গেছে।’ তবুও নিজের এলাকাতেই ফেরত আসতে পেরে তিনি খুশি।

দক্ষিণের খান ইউনিস শহরে ফিরে আসা মানুষজন নীরবে হেঁটে যাচ্ছিলেন ধুলোমাখা ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে। এক কিশোর কাঁধে একটি বোঝা নিয়ে হেঁটে চলেছে, আর মধ্যবয়সী আহমেদ আল-ব্রিম ঠেলছেন একটি সাইকেল, যার সামনে- পেছনে বাঁধা ছিল কিছু কাঠ। তিনি বলেন, আমাদের এলাকা পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা কোথায় থাকব জানি না। তবুও ঘরে ফেরার আনন্দ মন ভরিয়ে তুলেছে।

অন্যদিকে, মেহদি সাকলা নামের এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের কোনো ঘর নেই—সব ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু ভাঙা ইট-পাথরের ওপর হলেও আমরা ফিরে আসতে পেরে খুশি। এই আনন্দই সবচেয়ে বড়।

এদিকে, ধ্বংসস্তূপের ভেতর দাঁড়িয়ে মানুষ ঘরে ফেরার আনন্দ উপভোগ করলেও সামনে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি পুরোপুরি কার্যকর হবে কি না, গাজা পুনর্গঠনের ভবিষ্যত কী হবে—এসব প্রশ্ন এখনো ঝুলে আছে। কিন্তু গাজাবাসীর কাছে আপাতত সবচেয়ে বড় অর্জন হলো নিজ নিজ ভূমিতে ফিরে আসা।

সূত্রঃ রয়টার্স

এম.কে
১১ অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

খেতে গিয়ে জ্যান্ত অক্টোপাস আটকে গেল গলায়, হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু বৃদ্ধের

বিদেশি কর্মী টানতে ভিসার সংখ্যা ৩০ গুণ বাড়াচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া

রুমানিয়ার সীমান্তে বাংলাদেশিসহ ১১৬ জন গ্রেফতার