ফ্রান্সের বোর্দোতে প্রথম যখন অ্যালকোহলমুক্ত মদের দোকান খোলা হয়, তখন অনেককেই চমকে গিয়েছিলেন। মদ প্রস্তুতকারকরা বুঝতে পেরেছিলেন, অ্যালকোহলমুক্ত মদের বাজার ভবিষ্যতে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
ফ্রান্সের বোর্দো অঞ্চলের আঙুর বাগানে তৈরি হচ্ছে অ্যালকোহলমুক্ত ওয়াইন। যা এক সময় অসম্ভব মনে হয়েছিল, তা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
বোর্দোর ওয়াইন বিশেষজ্ঞ ফ্রেডেরিক ব্রোশে বলেন, “যখন আমরা কয়েক বছর আগে শুরু করেছিলাম, তখন যা তৈরি করতাম তা সত্যিই খারাপ ছিল। কিন্তু আমরা অনেক অগ্রগতি করেছি। আজ আমরা আমাদের লক্ষ্যকে আরও কাছাকাছি পেয়ে গেছি। আমি মনে করি, এটি মদ শিল্পে এক বিপ্লব আনতে চলেছে।”
বিভিন্ন কারণেই এই সময়টি অ্যালকোহলমুক্ত ওয়াইনের জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে। প্রথমত, ফরাসি মদ শিল্পে সংকট চলছে। দেশীয় ভোক্তা কম মদ খাচ্ছেন এবং চীনা বাজার আগের মতো নেই। ফ্রান্সের পুরানো আঙুর বাগানগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, তরুণদের মধ্যে মদ খাওয়ার অভ্যাস কমেছে। তারা বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। বর্তমানে ফ্রান্সের বিয়ার বাজারের ১০ শতাংশ অ্যালকোহলমুক্ত, স্পেনে তা ২৫ শতাংশ।
তৃতীয়ত, মদ তৈরির প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে।
অতীতে এবং এখনো বেশিরভাগ সস্তা মদ বানানোর পদ্ধতি ছিল, অ্যালকোহল বাষ্পীভূত করার পরে প্রতিস্থাপনকারী স্বাদ যোগ করা। এর ফলে, রেড ওয়াইনের স্বাদ মোটেও ভালো হতো না। এই ধরনের পানীয়কে মূলত মদ না বলে “অ্যালকোহলমুক্ত মদভিত্তিক পানীয়” বলা যায়।
তবে এখন নতুন পদ্ধতি এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে কম তাপমাত্রার ভ্যাকুয়াম ডিস্টিলেশন এবং “অ্যারোমা ক্যাপচার” অর্থাৎ ঘ্রাণ ধরে রেখে অ্যালকোহলমুক্ত মদ বানানো। এর ফলে এমন মদ তৈরি হচ্ছে, যা আইনগতভাবে মদ হিসেবে পরিচিত হতে পারে, এগুলো সচেতন ভোক্তাদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে।
মডারেটর সদস্য ফ্যাবিয়েন মার্শান-কাসাগন বলে, “রেড ওয়াইনে আপনাকে এমন একটি অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে যা ঐতিহ্যগত মদের মতো হবে না।”
তিনি বলেন, “কিন্তু আপনি যা পাবেন তা হলো একটি প্রকৃত মদের মুহূর্ত। বুগেত, ট্যানিন, ফল, ভারসাম্য– সবকিছুই উপভোগ করার জন্য সেখানে আছে।”
সেন্ট-এমিলিওনের কাছে ‘ক্লো দে বুয়ার্দ’ খামারের এক-তৃতীয়াংশ বিক্রি এখন অ্যালকোহলমুক্ত ব্র্যান্ডের হচ্ছে। ২০১৯ সালে পিএসজি ফুটবল ক্লাবের কাতারি মালিকদের জন্য একটি অ্যালকোহলমুক্ত মদ তৈরি করতে বলার পর খামারের মালিক করালি দে বুয়ার্দ প্রথম এই সম্ভাবনাটি দেখতে পান।
তিনি বলেন, “আমার পরিবার এক বছর আমার সাথে কথা বলত না। এখনো মদ প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে আমি ঘৃণা ভরা মেইল পাই। তারা বলেন, আমি বাজার নষ্ট করছি।”
করালি আরও বলেন, “কিন্তু এখন আমার বাবা আমাকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, আমি মদের ট্রেনের ইঞ্জিন। এবং আজকের কঠিন সময়ে বেঁচে থাকার কারণ হলো, আমরা অ্যালকোহলমুক্ত বাজারে চলে এসেছি।”
বোর্দো ফ্যামিলিজ কোঅপারেটিভের মদ প্রস্তুতকারক বার্নার্ড রাবু বলেন, ” পিউরিস্টদের জন্য এটা মেনে নেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু আমাদের বিকশিত হতে হবে। বাস্তবতা হলো, গ্রাহকরা আগের মতো সেখানে নেই। তাই আমাদের তাদের কাছে যেতে হবে, না হলে তারা অন্য কোথাও চলে যাবে।”
অ্যালকোহলমুক্ত মদের প্রচারকরা জানান, এটি মদ পান না করা মানুষদের জন্য একটি সুযোগ।
মদ বিশেষজ্ঞ ফ্রেডেরিক ব্রোশে বলেন, “মদ শিল্প আগে যেমন ছিল এখন তেমনটাই আছে ভাবাটা বোকামি।”
তিনি বলেন, “বিষয়গুলো বিকশিত হয়। একসময় ব্যারেল একটি উদ্ভাবন ছিল। কর্ক ছিল একটি উদ্ভাবন, আঙ্গুরের জাত ছিল একটি উদ্ভাবন। আর এখন এটা একটি নতুন উদ্ভাবন এবং এটি শিল্প ও এর সুন্দর পরিবেশের পাশাপাশি সংস্কৃতি বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪