রমজান মাস সমস্ত বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র। এই মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমস্ত প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকেন মুসলিমরা। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি বেশ কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। নইলে রোজা ভেঙে যায়।
জেনে নেবো রোজা ভাঙ্গার কারণসমূহ:
১. পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙে যায়; যদি রোজাদারের এ কথা মনে থাকে যে; সে রোজা রেখেছে। সুতরাং কেউ যদি রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার ও সঙ্গম করে, তবে তার রোজা ভাঙবে না। অবশ্য, স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, ৩য়খণ্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা)
২. হুক্কা, সিগারেট, চুরুট ইত্যাদি পান করলেও রোজা ভেঙে যায়; যদিও নিজে ধারণা করে যে, কণ্ঠনালী পর্যন্ত ধোঁয়া পৌঁছেনি। (বাহারে শরীয়ত, ৫ম খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)
৩. পান কিংবা তামাক খেলেও রোজা ভেঙে যায়; যদিও সেটার পিক বারবার ফেলে দেয়া হয়। কারণ কণ্ঠনালীতে সেগুলোর হালকা অংশ অবশ্যই পৌঁছে থাকে। (বাহারে শরীয়ত, ৫ম খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)
৪. চিনি জাতীয় খাদ্য; যা মুখে রাখলে গলে যায়, তা মুখে রেখে থুথু গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। (বাহারে শরীয়ত, ৫ম খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)
৫. দাঁতের মধ্যভাগে কোনো জিনিস ছোলা (চানাবুট) পরিমাণ কিংবা তার ছেয়ে বেশি আঁটকে থাকার পর তা খেয়ে ফেললে, কিংবা ঐ পরিমাণের চেয়ে কম; কিন্তু মুখ থেকে বের করে পুনরায় খেলে, রোজা ভেঙে যাবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠা)
৬. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে কণ্ঠনালীর নিচে নেমে গেলে এবং রক্ত যদি থুথু অপেক্ষা বেশি কিংবা সমান অথবা কম হয় এবং সেটার স্বাদ কণ্ঠে অনুভূত হলে রোজা ভেঙে যাবে। যদি সেটা থুথুর চেয়ে কম থাকে, আর স্বাদও কণ্ঠে অনুভূত না-হয়, তাহলে এমতাবস্থায় রোজা ভাঙ্গবে না। (দুররে মুখতার, ৩য়খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৮)
৭. নাকের ছিদ্র দিয়ে ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৪)
৮. কুলি করা অবস্থায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও পানি কণ্ঠনালী বেয়ে নিচে নেমে গেলে কিংবা নাকে পানি দেওয়ার কারণে তা মগজে পৌঁছে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। রোজাদারের দিকে কেউ কোন কিছু নিক্ষেপ করলো, আর তা তার কণ্ঠে পৌঁছে গেলো; তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আল জাওয়াতুন নাইয়ারাহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৮)
৯. ঘুমন্ত অবস্থায় পানি পান করলে, কিছু খেয়ে ফেললে অথবা মুখ খোলা থাকায় পানির ফোটা কিংবা বৃষ্টি কণ্ঠে চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (আল-জাওয়াতুন নাইয়ারাহ, ১ম খণ্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা)
১০. অন্য কারো থুথু গিলে ফেললে কিংবা নিজেরই থুথু মুখ থেকে বের করার পর গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। (আমলগীরী, ১ম খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা) বি: দ্র: যতক্ষণ পর্যন্ত থুথু কিংবা কফ মুখের ভিতর বিদ্যমান থাকে। তা গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না। বারবার থুথু ফেলতে থাকা জরুরি নয়।
১২. মুখে রঙিন সুতা অথবা এ জাতীয় কিছু রাখার ফলে থুথু রঙিন হয়ে গেলে, এবং ঐ রঙিন থুথু গিলে ফেললে রােজা ভেঙে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)
১৩. চোখের পানি মুখের ভিতর চলে গেলে আর সেটা গিলে ফেললে। যদি দুয়েক ফোটা হয়তবে রোজা ভাঙবে না। আর যদি বেশি হয়, যার ফলে সেটার লবণাক্ততা মুখে অনুভূত হয়। তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। ঘামের ক্ষেত্রেও একই বিধান। (আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)
১৪. ইচ্ছাকৃত মুখভর্তি বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত হলে ভাঙবে না। (দুররে মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা)
১৮ এপ্রিল ২০২১
টিভিথ্রি ডেস্ক