মিয়ানমার ও সুদানের পর এবার গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে বিশ্বের শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নাগরিকরা। মার্কিন জরিপ প্রতিষ্ঠান রাসমুসেন রিপোর্টসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উঠে আসে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রতি ১০ জনের মধ্যে চারজনের বেশি ভোটার বিশ্বাস করেন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের শঙ্কা রয়েছে।
রাসমুসেন রিপোর্টস গত মাসের ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল সময়ের মধ্যে এই জরিপটি পরিচালনা করে। যেখানে ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি মার্কিন ভোটার অংশ নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, সব কিছু ঠিক থাকলে তারা আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন।
এসব ভোটদাতাদের মধ্যে ৪১ শতাংশ ভোটার মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে একটি গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হতে পারে। এই ৪১ শতাংশ ভোটারের মধ্যে আবার ১৬ শতাংশ মনে করেন- এই গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা খুবই বেশি। অন্যদিকে জরিপে অংশ নেওয়া ৪৯ শতাংশ ভোটারই মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ বেধে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই। জরিপে অংশ নেওয়া বাকি ১০ শতাংশ ভোটার অবশ্য জানিয়েছেন, তারা গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া অথবা না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নন।
জরিপে আরও দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৩৭ শতাংশ ভোটারই মনে করেন- বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনরায় নির্বাচিত হলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেলায় এ ধরনের মনোভাব পোষণকারী মানুষের সংখ্যা কম।
জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ২৫ শতাংশ ভোটার মনে করেন, ট্রাম্প জয়ী হলে গৃহযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা বেশি হবে। গত মাসে নতুন সিনেমা ‘সিভিল ওয়ার’ বক্স অফিসে এক নম্বর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার পরই এই ধরনের আলোচনা আরও বেড়েছে। সারা দেশে কলেজ ক্যাম্পাসে সহিংসতার ক্রমবর্ধমান দৃষ্টান্তের মধ্যে ফলাফলগুলো উদ্ভুত হয়েছে।
২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা ইসরাইলবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছে।
নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলন বেশ শক্ত রূপ নিয়েছে। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আন্দোলন চলছে। সেই সঙ্গে চলছে ছাত্র-পুলিশ ধরপাকড়ও।
মার্কিন পুলিশ আন্দোলন দমনে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম, সাঁজোয়া যান ও স্টান গ্রেনেডের মতো অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। একদিকে নির্বাচনি বছর, অন্যদিকে অস্থিতিশীলতা। সব মিলিয়ে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটি। ফলে দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা আরও প্রবল হয়ে উঠছে।
১৮৬১ সালে প্রথমবার গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছিল দেশটি। দীর্ঘ চার বছর পর যার সমাপ্তি ঘটে ১৮৬৫ সালে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এবং সবচেয়ে বিভাজনকারী সংঘাত। এ যুদ্ধের ফলে ৬ লাখ ২০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। লক্ষাধিক আহত হয় এবং দক্ষিণাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আর বাইডেন তার দ্বিতীয় মেয়াদে লড়ার জন্য ডেমোক্র্যাটদের মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। ফলে চার বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মতো এবারও ট্রাম্প-বাইডেন প্রতিযোগিতা নিশ্চিত।
সূত্রঃ দ্য নিউইয়র্ক সান
এম.কে
০৪ মে ২০২৪