সম্প্রতি ইটালি সফরে গিয়ে দেশটির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সঙ্গে আশ্রয় পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার৷ ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়া রেখে আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে দেশটির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে ইটালি৷ সেই বিষয়টি নিয়েও বেশ আগ্রহী স্টারমার৷
ইটালিতে অনিয়মিত অভিবাসী আসার হার গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ কমে যাওয়ার মেলোনির প্রশংসা করেন তিনি৷ যুক্তরাজ্য এবং আলবেনিয়ার মধ্যে অভিবাসন বিষয়ক একটি চুক্তি রয়েছে৷ ইটালির মতো করে এমন চুক্তি সম্প্রসারণেও বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷
সফর কালে ইটালির অভিবাসন সমন্বয় কেন্দ্র ঘুরে দেখেন স্টারমার৷ ব্রেক্সিট-পরবর্তী অভিবাসন প্রবাহ পরিচালনায় সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি৷
আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে যুক্তরাজ্যের গত সরকারের নেয়া প্রকল্পে বরাদ্দ করা ১০ কোটি ডলার অর্থ অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে নতুন প্রযুক্তি কেনা এবং মানবপাচারকারী চক্রকে ভেঙে দেয়ার কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির নতুন সরকার৷ লেবার পার্টির সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার এ কথা জানিয়েছে৷
জুলাইয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে দেশটির ক্ষমতায় এসেছিল লেবার পার্টি৷ তারা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগের কনজারভেটিভ পার্টি সরকারের নেয়া অর্থাৎ আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর বিতর্কিত পরিকল্পনাটি বাতিল করে দিয়েছে৷ সেই পরিকল্পনার জন্য বরাদ্দ করা অর্থকেই এখন কাজের লাগানোর কথা ভাবছে বর্তমান সরকার৷
প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মানবপাচারকারী চক্রকে ভেঙে দেয়া হবে৷ ফ্রান্সের উত্তর উপকূল থেকে অভিবাসীদের ছোটো নৌকায় করে বিপজ্জনক ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে যারা অর্থের বিনিময়ে কাজ করে সেই চক্রটিকে ভেঙে দেয়াই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিতে (এনসিএ) আরো বেশিসংখ্যক সীমান্ত সুরক্ষা কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া এবং একশ বিশেষজ্ঞ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জন্যও এই তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করা হবে৷ যাতে সমন্বিতভাবে মানবপাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়৷
যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসনের বিষয়টিকে তারা অগ্রাধিকারে নিয়ে চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলা করতে চায়৷ প্রতিবেশী দেশগুলোর সহযোগিতা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার থেকে অভিবাসীদের জীবনকে রক্ষা করতে চায় যুক্তরাজ্য৷
সংগঠিত মানবপাচার চক্র ভেঙে দিতে ইউরোপীয় প্রচেষ্টাকে গতিশীল করতে এরই মধ্যে ইউরোপোল-ভিত্তিক ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে৷
সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এনসিএ মহাপরিচালক রব জোনস৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই৷ এটি আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় পরিসরে আমাদের প্রযুক্তি, তথ্য সংগ্রহ এবং দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘অভিবাসন সংক্রান্ত সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলা করা এনসিএ-এর শীর্ষ অগ্রাধিকারের একটি৷ আমরা বর্তমানে এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জড়িত গ্যাং বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৭০টি তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছি৷ এ কাজের জন্য আমরা আমাদের জনবল এবং দক্ষতা আরো বাড়াচ্ছি৷’’
মানবপাচার চক্র ভেঙে দিতে এনসিএ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান রব জোনস৷
সূত্রঃ এএফপি / দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৪ নভেম্বর ২০২৪