উগান্ডার একজন আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যের রুয়ান্ডা নীতির কারণে যুক্তরাজ্যকে আর নিরাপদ দেশ হিসাবে মনে করেন না বলে আইরিশ আদালতকে জানান। আশ্রয়প্রার্থী বলেছেন যুক্তরাজ্য নিরাপদ তৃতীয় দেশ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়প্রার্থী তার মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত তাকে যেন যুক্তরাজ্যে ফেরত না দেয়া হয় এই দাবি আদালতের কাছে রাখেন। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের হাইকোর্ট গত ডিসেম্বরে রুয়ান্ডার সাথে অংশীদারিত্ব বা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অধীনে যে রুয়ান্ডানীতি চালু হয়েছিল সেটাকে বৈধতা দেয়। তবে আদালত এটাও বলে প্রত্যেক আশ্রয়প্রার্থীর আপিল করারও পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
আইরিশ হাইকোর্টে আশ্রয়প্রার্থীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমন ডরনান বলেন, তার ক্লায়েন্ট দাবি করেছেন যে রুয়ান্ডা নীতি বা স্কিমটি মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশন (ইসিএইচআর) এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যখন আলোচনা করেছিলেন আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডাতে পাঠানোর তা যুক্তরাজ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে।
মিঃ জাস্টিস চার্লস মীনান প্রশ্ন করেছিলেন আইরিশ আদালতকে, লন্ডনের হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি না দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে কিনা। তিনি আবেদনকারীর লিভ চাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা আপিল ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এসাইলাম আবেদনকারী (৪০) তার অতীত নিয়ে বলেন, তিনি প্রাণের ভয়ে উগান্ডা ছেড়েছিলেন এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে আয়ারল্যান্ডে চলে যান। যেখানে তিনি এসাইলামের আবেদন করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন উগান্ডায় ফিরে গেলে তিনি নিপীড়নের মুখোমুখি হবেন এবং ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কিন্তু তার এসাইলাম আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়। পরবর্তীতে তিনি একজন বৃটিশ নাগরিককে বিয়ে করেছিলেন এবং আবেদন করে ২০২১ সাল পর্যন্ত থাকার অনুমতি পান যার মেয়াদ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি তালাক প্রাপ্ত এবং যুক্তরাজ্যে বাস করার আর কোনো অনুমতি নেই। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তিনি উগান্ডা ফিরে যেতে চান না কারণ উগান্ডা তার জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার যখন তৃতীয় দেশ হিসাবে রুয়ান্ডার নাম প্রস্তাব করে তখন তিনি খুবই ভীত হয়ে পড়েন। তিনি মনে করেন তৃতীয় দেশ হিসাবে যুক্তরাজ্য এখন আর রুয়ান্ডানীতির কারণে নিরাপদ নয়।
আন্তর্জাতিক সুরক্ষা আপিল ট্রাইব্যুনালের মতে যেহেতু আশ্রয়প্রার্থীর ইউকে রেসিডেন্সির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, সেহেতু যুক্তরাজ্য সরকার তাকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের কাছে আশ্রয়প্রার্থী দাবি বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বা মামলা চলাকালীন সময়ে যুক্তরাজ্যের রুয়ান্ডানীতির কারণে তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, যদি তাকে রুয়ান্ডায় সরিয়ে দেওয়া হয় তবে সেটা হবে ঝুঁকি মূল্যায়নে ট্রাইব্যুনালের ব্যর্থতা।
এম.কে
০৭ মার্চ ২০২৩