6.7 C
London
December 19, 2024
TV3 BANGLA
ইউরোপপ্রবাসে বাংলাদেশ

রোমানিয়ায় ইউরোপ গেইম আতঙ্ক

গত বছরের মতো ২০২৩ সালেও কাজের ভিসা নিয়ে রোমানিয়া আসছেন বাংলাদেশিরা৷ বেশিরভাগ অভিবাসীরাই ওয়ার্ক পারমিটে রোমানিয়ায় আসার পর প্রতারক কোম্পানির ফাঁদে পড়ছেন৷ রোমানিয়ায় আসার পর চাকুরি না দিয়ে অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সেনজেনের অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য অভিবাসীদের চাপ দেয়া হচ্ছে বলে একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়।

২০২২ সালের মধ্যভাগ থেকে অনিয়মিত পথে রোমানিয়া থেকে সেনজেন সীমান্ত ঢুকতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়ে নিয়মিত সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশিরা।

ইনফো মাইগ্রেন্টসের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, “সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া কাজের ভিসায় পাঠাতে ১৪/১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করে বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো। যার কারণে বেশিরভাগ লোকেরা রোমানিয়াকেই ইউরোপের দ্বার হিসেবে গ্রহণ করেছে।”

তাদের প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নেওয়ার সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর চুক্তি অনুযায়ী পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু রোমানিয়া পৌঁছানোর পর কোম্পানির নির্ধারিত থাকার জায়গায় নিয়ে আসা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটিকে অনানুষ্ঠানিক আশ্রয় শিবিরের মতো পরিচালনা করা হয়। সেইসব প্রতিটি কক্ষে ছয় থেকে সাত জন করে অভিবাসীর থাকার জায়গার ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা যায় ।

রোমানিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে অবস্থান করা একজন অভিবাসী ফারুক ইনফো মাইগ্রেন্টসকে বলেন, “ রোমানিয়া আসার পরে নিম্ন মানের থাকার জায়গা দেখে হতাশ হই। কোম্পানির নিয়োগ করা বাংলাদেশিরা আমাদের এখানকার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। তারা আমাদের খাবার দেয়৷ কিন্তু খাবারের মানও অত্যন্ত নিম্নমানের। ডাল, আলু ভর্তা, সবজি এবং এক প্রকার মুরগির হাড় দেয়া হয় প্রায় সময়।”

 

 

 

 

ফারুক আরো জানান, “রোমানিয়ায় আসার কয়েকদিন পরে আমাকে একটু কাঠের ফ্যাক্টরিতে কাজে পাঠানো হয়। অথচ আমার কাজের চুক্তি এবং বারবার আলোচনায় বলা হয়েছিল রেস্তোরাঁ অথবা ফুড প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে কাজ দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখি সেটি আলোচনার পুরোপুরি বিপরীত।”

তবুও উপায় না দেখে কোম্পানির কথা অনুযায়ী কাঠের ফ্যাক্টরিতে গিয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পান এটি পুরোপুরি একজন দক্ষ কাঠমিস্ত্রী বা কার্পেন্টারের কাজ। যেটি তার মতো একজন ব্যক্তির দ্বারা অসম্ভব। তিনি সেখান থেকে ফিরে এসে তা কোম্পানিকে জানান।

ফারুক পরবর্তীতে রোমানিয়ায় স্থায়ী হয়েছেন এমন বাংলাদেশিদের কাছে জানতে পারেন আসলে তিনি যেই কোম্পানিতে এসেছেন এটি এক প্রকার সাপ্লাই কোম্পানি। যারা তৃতীয় পক্ষ হয়ে কাজ করেন। যার ফলে এসব কোম্পানি সরাসরি অভিবাসীদের কাজ দিতে পারে না। তারা মূলত কর্মী সরবরাহ করে।”

তিনি যোগ করেন,

অনেক বাংলাদেশিরা না বুঝে গেইম বা অবৈধ উপায়ে সেনজেন সীমান্তে চলে যান। এই কোম্পানিগুলো এটি জানে। তারা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি এজেন্টদের যোগসাজশে রমরমা ব্যবসা করছে। এটি একটি চক্র।

 

 

 

 

 

তার মতে, “রোমানিয়ায় আসার পর যারা আমার মতো বৈধভাবে কাজ করতে চান তাদেরকেও টাকার বিনিময়ে গেইমের পথে যেতে চাপ দেয়া হয়। আমাকে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে অতিরিক্ত তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা দেয়া হলে আমাকে লরিতে করে ইটালি পৌঁছে দেয়া হবে। তারা আমার সুবিধা অনুযায়ী কোন কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে না।”

অপরদিকে ফারুক ব্যাখ্যা করেন, “রোমানিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আসা ব্যক্তিরা কোম্পানি পরিবর্তন করতে চাইলে অন্য একটি কাজ যোগাড় করতে বর্তমান নিয়োগকর্তা থেকে একটি এনওসি বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট নিতে হয়। আমি নতুন আসায় আরেকটি কাজ দ্রুত যোগাড় করাও বেশ জটিল।”

তিনি আরও বলেন, “তারপরও আমি আমার বর্তমান সাপ্লাই কোম্পানির কাছে এনওসি দিবে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। তারা এটির জন্যেও আবার টাকা দাবি করছে। এত টাকা খরচ করে এসে আমার পরিবার আমাকে আবারও টাকা পাঠানোর কোন পরিস্থিতিতে নেই।

মূলত ‘গেইম’ মানে অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপের পথে স্থল কিংবা জলপথ পাড়ি দেয়া। অভিবাসীরা অনেক সময় নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে চেষ্টা করলেও প্রায়শই মানবপাচারকারীদের সহায়তা নিতে বাধ্য হন।

ফারুকসহ তারা সঙ্গে থাকা আরও অনেকেই বর্তমানে একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন। ভবিষ্যতে কাজের ভিসায় রোমানিয়া আসবেন এমন ব্যক্তিদের তাদের কোম্পানি সম্পর্কে শতভাগ জেনে আসার পরিমার্শ দিয়েছেন এই ভুক্তভোগী। ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন শহরে থাকা এজেন্টরা প্রায়শই বাংলাদেশি অভিবাসীদের হোটেল সেক্টরে কাজের কথা বলেন৷ কিন্তু রোমানিয়ায় এসে দেখা যায় এগুলো বেশিরভাগই সাপ্লাই অথবা নির্মাণখাত সংশ্লিষ্ট কোম্পানি।

 

 

আরো পড়ুন

ইটালির ফ্যাশন মঞ্চে বাংলাদেশি নারীসহ অভিবাসীরা

ইইউ পরিবার থেকে দূরেই থাকছে সুইজারল্যান্ড

লন্ডনে বিশ্বের প্রথম ট্রান্সপারেন্ট স্কাই সুইমিং পুল

অনলাইন ডেস্ক