TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

লন্ডনে আবাসন সংকট তীব্রতর, পাঁচ বরোতে বন্ধ সাশ্রয়ী ঘর নির্মাণ

লন্ডনের আবাসন সংকট ক্রমেই গভীর হচ্ছে। সিটি হলের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (এপ্রিল–সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর পাঁচটি বরোতে একটি সাশ্রয়ী ঘরও নির্মাণ শুরু হয়নি। এই বরোগুলো হলো সিটি অব লন্ডন, হ্যাকনি, ল্যামবেথ, মার্টন এবং রিচমন্ড।

এছাড়া আরও ১২টি বরোতে নির্মাণ সংখ্যা এক অঙ্কের মধ্যেই সীমিত। এসব বরো হলো—বার্কিং অ্যান্ড ডাগেনহাম, বেক্সলি, ব্রেন্ট, ক্রয়ডন, এনফিল্ড, হারিংগে, হাউন্সলো, ইজলিংটন, কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি, কিংস্টন, ওয়ান্ডসওয়ার্থ এবং ওয়েস্টমিনস্টার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি লন্ডনের আবাসন বাজারের ভয়াবহ অবস্থা এবং নীতিগত অচলাবস্থার প্রতিফলন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে লন্ডনে ৮৯২টি সাশ্রয়ী ঘর নির্মাণ শুরু হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুনে শুরু হওয়া ৩৪৭টি প্রকল্প যুক্ত করলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১,২৩৯। এটি ২০১৬ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাদিক খানের মেয়াদকালের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অগ্রগতি হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এই ধীরগতি মোকাবিলায় গত মাসে মেয়র সাদিক খানকে জরুরি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—যার মাধ্যমে ডেভেলপারদের জন্য বাধ্যতামূলক সাশ্রয়ী আবাসনের অনুপাত ৩৫% থেকে কমিয়ে ২০% করা যাবে। তবে মেয়রের মুখপাত্র একে “উৎসাহব্যঞ্জক” অগ্রগতি বলেছেন, কারণ গত বছরের তুলনায় নির্মাণ কার্যক্রমে ১১৩% বৃদ্ধি দেখা গেছে।

গ্রেটার লন্ডন অথরিটির প্রকাশিত তথ্যে আরও দেখা গেছে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৩০টি কাউন্সিল হাউস নির্মাণ শুরু হয়েছে এবং ১,০৩২টি সম্পন্ন হয়েছে। একই সময়ে ২,৯০৪টি সাশ্রয়ী ঘর সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ২১৫টি খোলা বাজার থেকে কেনা।

মেয়রের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সামাজিক ও সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণে গত বছর যে অগ্রগতি হয়েছে, তা ইতিবাচক সংকেত। লন্ডনে ১৯৭০-এর দশকের পর সর্বাধিক কাউন্সিল হাউস নির্মাণ হয়েছে এবং মহামারির আগেই ১৯৩০-এর দশকের পর সর্বাধিক নতুন ঘর সম্পন্ন হয়েছে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “তবুও লন্ডনের আবাসন সংকট ভয়াবহ। আগের সরকারের ব্যর্থতার উত্তরাধিকার, উচ্চ সুদের হার, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি, ব্রেক্সিট এবং মহামারির প্রভাব একত্রে নির্মাণ খাতকে বিপর্যস্ত করেছে। মেয়র এখন রেকর্ড £১১.৭ বিলিয়ন বিনিয়োগের সহায়তায় আবাসন নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে কাজ করছেন এবং গ্রিন বেল্ট এলাকাতেও উন্নয়ন বিবেচনা করা হচ্ছে।”

তবে লন্ডন অ্যাসেম্বলির লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা হিনা বোখারি সরকারের অগ্রগতির দাবিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি বলেন, “লন্ডনবাসী সাশ্রয়ী ঘরের জন্য মরিয়া। কিন্তু মেয়র সাদিক খানের আমলে নির্মাণ কার্যক্রম ধসে পড়েছে। প্রতিশ্রুতির পরও নতুন ঘর তৈরির ধারা কার্যত থেমে গেছে।”

সিটি অব লন্ডন কর্পোরেশন জানিয়েছে, তাদের এলাকা মূলত বাণিজ্যিক এবং এখানে মাত্র ৮,০০০ জন বাসিন্দা থাকায় অন্যান্য বরোর সঙ্গে তুলনা করা যথাযথ নয়। তারা বাণিজ্যিক ডেভেলপারদের অনুদান ব্যবহার করে অন্যান্য বরোতে সামাজিক আবাসন নির্মাণে সহায়তা করে।

সরকারের হিসাব অনুযায়ী, লন্ডনে প্রতি বছর অন্তত ৮৮,০০০ নতুন ঘর প্রয়োজন। মেয়রের লক্ষ্য হলো, বর্তমান তহবিল কর্মসূচির আওতায় ১৭,৮০০ থেকে ১৯,০০০টি সাশ্রয়ী ঘর নির্মাণ।

গত সপ্তাহে হাউজিং সেক্রেটারি স্টিভ রিড মেয়র সাদিক খানকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বিল্ড, বেবি, বিল্ড”— কারণ পূর্ব লন্ডনের এক বরোতে এখন একটি পারিবারিক ঘর পেতে কাউন্সিলের অপেক্ষার তালিকায় থাকতে হচ্ছে ১৮ বছর পর্যন্ত। বর্তমানে লন্ডনে ৩,৩০,০০০ পরিবার কাউন্সিল হাউসের জন্য অপেক্ষমাণ।

২০২৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ডেভেলপারদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণের বাধ্যতামূলক অনুপাত ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা লন্ডনের আবাসন নীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বিতর্কিত পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সূত্রঃ দ্য স্ট্যান্ডার্ড

এম.কে

আরো পড়ুন

ইংল্যান্ডে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বাড়ছে অপরাধ

রানির শেষ বিদায়ে খরচ দুই হাজার কোটি টাকা

বিলেতে বাড়ি কেনাবেচা: মর্গেজ কি এবং কিভাবে করতে হয়?

অনলাইন ডেস্ক