লন্ডনের ভিক্টোরিয়া পার্কে আয়োজিত মুসলিম চ্যারিটি রানকে ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দিয়েছে, কারণ ইভেন্টটিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। পুরুষ ও সব বয়সী ছেলেদের পাশাপাশি কেবল ১২ বছরের নিচের মেয়েদের অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আয়োজক ছিল ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টার।
বিজ্ঞাপনে ইভেন্টটিকে ‘সবার জন্য উন্মুক্ত অন্তর্ভুক্তিমূলক দৌড়’ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় তা সমালোচনার মুখে পড়ে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ব্রিটিশ কমিউনিটি বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভ রিড ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যে পুরুষরা পার্কে দৌড়াতে পারবে কিন্তু নারীরা পারবে না।”
এলবিসি রেডিওতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিড বলেন, “আমি এই ঘটনায় যেমন সবাই ক্ষুব্ধ, আমিও তাই। এটা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং সমতার নীতির পরিপন্থী।” তিনি আরও বলেন, “ইক্যুয়ালিটি অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিশন (ইএইচআরসি) বিষয়টি পর্যালোচনা করবে এবং আইনের কোনো লঙ্ঘন হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”
এদিকে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলও ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য। কাউন্সিলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এই ইভেন্টটি স্বাধীনভাবে আয়োজিত হয়েছিল, কাউন্সিল এতে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। তবে আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে আমাদের সব ধরনের ক্রীড়া ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে।”
ইস্ট লন্ডন মসজিদ এক বিবৃতিতে জানায়, “আমাদের লক্ষ্য সমাজের কল্যাণ ও সুস্থতা বৃদ্ধি করা। নারী অংশগ্রহণকে আমরা সর্বদাই উৎসাহিত করি। আমাদের অনেক নারী সদস্য নৌকা বাইচ, সাইক্লিং, হাইকিং, ম্যারাথনসহ নানা খেলাধুলায় অংশ নিয়ে চ্যারিটি তহবিল গঠন করেছেন।”
ইভেন্টটিকে মসজিদের ওয়েবসাইটে ‘ইস্ট লন্ডনের মুসলিম ক্যালেন্ডারের অন্যতম প্রধান আয়োজন’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা স্থানীয় যুব প্রকল্প, ফুড ব্যাংক, শরণার্থী সহায়তা ও আন্তর্জাতিক মানবিক তহবিলের জন্য অর্থ সংগ্রহে ভূমিকা রাখে।
টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র লুত্ফুর রহমান অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আপনাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ—বিশেষ করে তরুণ, প্রবীণ ও সমগ্র সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাই আজকের অংশগ্রহণের জন্য।” তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু নারী অভিযোগ করেছেন, তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া বৈষম্যমূলক এবং লন্ডনের সমতার মূল্যবোধের পরিপন্থী।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী ধর্মীয় বা দাতব্য সংস্থাগুলো নির্দিষ্ট শর্তে লিঙ্গভিত্তিক আয়োজন করতে পারে, তবে তা কখনোই প্রকাশ্য স্থানে সমতা ও অন্তর্ভুক্তির নীতিকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে না। এখন দেখার বিষয়—ইএইচআরসি তদন্তের পর এই বিতর্ক কী পথে এগোয়।
নারী নিষিদ্ধ মুসলিম চ্যারিটি রানকে কেন্দ্র করে লন্ডনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে নিন্দা ও তদন্তের ঘোষণা এসেছে, আর আয়োজক মসজিদ বলছে—তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৬ অক্টোবর ২০২৫