স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসা নীতির পরিবর্তনে লন্ডনের পরিবহন সংস্থা ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন (TfL)-এর শতাধিক কর্মী চাকরি ও বসবাসের অধিকার হারানোর আশঙ্কায় পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে TfL কর্মীরা সরকারের কাছে নিয়ম পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে চিঠি জমা দিয়েছেন, যেখানে তারা “মানবিক বিবেচনায় ব্যতিক্রম” রাখার আহ্বান জানান।
সাম্প্রতিক ইমিগ্রেশন নীতির সংশোধনে বিদেশি কর্মীদের জন্য দক্ষতার মানদণ্ড বৃদ্ধি, কিছু পরিবহন পদের নাম “স্কিল্ড ওয়ার্কার তালিকা” থেকে বাদ দেওয়া এবং স্পনসরশিপের বেতন সীমা বাড়ানো হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে TfL-এর কমপক্ষে ৬৩ কর্মী সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে RMT ইউনিয়ন, যারা তাদের জন্য “অস্থায়ী সুরক্ষা ব্যবস্থা”র দাবি তুলেছে।
RMT-এর মহাসচিব এডি ডেম্পসি ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, “এই কর্মীরা স্থায়ী চাকরিতে আছেন, পরিবার গড়ে তুলেছেন, এখন তাদের চলে যেতে বলা অন্যায়। আমরা নীতির বিরুদ্ধে নই, কিন্তু এটা ক্রিকেটের নিয়মও নয়। আমরা সরকারের কাছে সময় ও মানবিকতা চাই।”
প্রভাবিত কর্মী অভি খেরগ বিবিসির অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা সব নিয়ম মেনে চলেছি, ফি দিয়েছি, দেশে সব বিক্রি করেছি, এখন বলা হচ্ছে ফিরে যেতে হবে—এটা অমানবিক।”
TfL জানিয়েছে, আগামী ১২ সপ্তাহে ৬১ কর্মীর ভিসা শেষ হয়ে যাবে, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেকেই তাদের ভিসা-অবস্থা TfL-কে জানান না। TSSA ইউনিয়ন বলছে, এই সংখ্যা ৩০০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এক বিবৃতিতে বলেন, “যেসব পরিবহনকর্মী মহামারির সময় লন্ডনকে সচল রেখেছেন, আজ তারাই ভিসা পরিবর্তনের কারণে চাকরি ও বসবাস হারানোর ঝুঁকিতে। এটি সম্পূর্ণ অন্যায় ও অগ্রহণযোগ্য।”
TfL-এর ডেপুটি মেয়র ফর ট্রান্সপোর্ট সেব ড্যান্স গত মাসে সরকারের কাছে নিয়ম পরিবর্তন স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছিলেন, সতর্ক করে বলেছিলেন যে, এতে TfL-এর কার্যক্রমেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে। কিন্তু ইমিগ্রেশন মন্ত্রী মাইক ট্যাপ জবাবে জানিয়েছেন, তিনি “এ বিষয়ে কোনো বৈঠকের প্রতিশ্রুতি দিতে পারছেন না।”
সরকারের পক্ষ থেকে হোম অফিস জানিয়েছে, “যারা ইতিমধ্যে স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসায় কাজ করছেন, তারা মেয়াদ শেষে নবায়নের আবেদন করতে পারবেন।”
এর আগে প্রিজন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (POA) একই পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ হয়ে জানিয়েছিল, ১,০০০-এরও বেশি কারাগার কর্মী প্রভাবিত হচ্ছেন। POA চেয়ারম্যান মার্ক ফেয়ারহার্স্ট একে “স্ক্যান্ডালাস” মন্তব্য করে বলেন, “সরকার তড়িঘড়ি করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুধু রিফর্ম পার্টিকে খুশি করার জন্য।”
TfL কর্মীদের দাবি, তারা যুক্তরাজ্যের পরিবহন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। নিয়ম পরিবর্তন স্থগিত না হলে লন্ডনের গণপরিবহনে দক্ষ কর্মী সংকট দেখা দিতে পারে, যা রাজধানীর দৈনন্দিন চলাচল ব্যবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

