বাংলাদেশ–ভারত ফুটবল ম্যাচে লাল–সবুজ সাজে উল্লাস করতে থাকা সাত সদস্যের এক বিদেশি পরিবারের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাবা-মা ও পাঁচ শিশুসন্তানের মাথায় লাল–সবুজ ব্যান্ডানা, গালে বাংলাদেশের পতাকা—টিভি পর্দায় বারবার দেখা মিলেছে তাদের। অনুসন্ধানে জানা যায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জ্যাকব বার্লিন ও জয়া বার্লিন; তবে বাংলাদেশই এখন তাদের স্থায়ী ঠিকানা।
জ্যাকব পেশায় কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট এবং ঢাকার গুলশানে তার একটি কাউন্সেলিং সেন্টার রয়েছে। পাশাপাশি দম্পতির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘অ্যাকশন-জয় এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড’-এর মাধ্যমে ফরিদপুরের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের তৈরি হস্তশিল্প যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করেন তারা। এই প্রতিষ্ঠানেই স্থায়ীভাবে কাজ করেন ৪০ জন কর্মী এবং আরও পাঁচ শতাধিক নারী আছেন উৎপাদন ও নকশা কাজে।
পরিবারটি সপরিবার প্রথম ফুটবল ম্যাচে যায় বাংলাদেশ–হংকং চায়না খেলায়। সেদিন সবার গায়ে ছিল বাংলাদেশ দলের জার্সি; জ্যাকব পরেছিলেন লুঙ্গি আর বুকে আঁকা ছিল লাল–সবুজ পতাকা। দম্পতি নিয়মিত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ দেখেন এবং হামজার প্রতি অনুরাগ থেকেই বাংলাদেশের ফুটবলের খোঁজখবর রাখা শুরু করেন।
বাংলাদেশের প্রতি বার্লিন পরিবারের ভালোবাসা শুধু ফুটবল-সমর্থনে সীমাবদ্ধ নয়। পুরো পরিবারই সাবলীল বাংলায় কথা বলেন; সন্তানদের বাংলা ডাকনাম রেখেছেন—আনন্দ, হাসি, খুশি, সুখী ও মিষ্টি। তাদের এই টান এক যুগেরও বেশি পুরোনো। ২০১৩ সালে একটি এনজিও প্রকল্পে চাকরি নিয়ে প্রথম বাংলাদেশে আসেন জ্যাকব–জয়া, এবং টানা ছয় বছর ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেন।
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেলেও সেখানে মন টেকেনি তাদের। মহামারির সময় বাংলাদেশে ব্যবসা বিস্তারের পরিকল্পনা করেন এবং ২০২২ সালে পুরো পরিবার নিয়ে আবার ফিরে আসেন ঢাকায়। বর্তমানে তারা ফরিদপুর ও ঢাকার মধ্যে সময় ভাগ করে থাকেন, সন্তানরা ঢাকায় পড়াশোনা করছে।
বাংলাদেশে জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জয়া বলেন, শুরুতে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পার্থক্য তাকে অস্বস্তি দিত। কিন্তু যৌনপল্লির নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মানুষের গল্প তাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। ধীরে ধীরে ভাষা, খাবার এবং স্থানীয় জীবনধারা তাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা এতটাই গভীর যে জ্যাকব ও জয়া এখন নাগরিকত্ব পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। নাগরিকত্ব পেলে ফরিদপুরে জমি কিনে স্থায়ীভাবে একটি বাড়ি তৈরি করে সেখানেই সারাজীবন কাটাতে চান তারা। তাদের ভাষায়, “বাংলাদেশ এখন আর বিদেশ নয়—এটাই আমাদের বাড়ি।”
সূত্রঃ প্রথম আলো
এম.কে

