রুয়ান্ডায় নির্বাসনে পাঠানোর জন্য একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটকে থাকা একজন সিরিয়ান এসাইলাম সিকার আত্মহত্যা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন না যে রুয়ান্ডা তার জন্য নিরাপদ দেশ হবে কিন্তু এরপরেও জোরজবরদস্তি রুয়ান্ডা প্রেরণের জন্য এই হুমকি দেন তিনি।
সিরিয়ান এসাইলাম প্রার্থী ক্লনব্রুক ইমিগ্রেশন অপসারণ কেন্দ্রের সেল থেকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাথে কথা বলেন। তিনি ২০২২ সালের জুন মাসে যুক্তরাজ্যে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে সিরিয়া হতে প্রবেশ করেন। তার রয়েছে নির্যাতন ও কারাবাসের ইতিহাস। তিনি জানান ডিটেনশন সেন্টারে যারা বন্দি আছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই একইরকম কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য।
কিন্তু রুয়ান্ডায় ফেরত পাঠানো হবে শুনে প্রত্যেকে এখানে কঠিন চাপে পড়েছে। কেউ খেতে বা ঘুমাতে পারছে না। নিজের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, নয় বছর সিরিয়ায় অত্যাচারিত হয়েছি, সেখানে কারাবন্দি ছিলাম। তাছাড়া লিবিয়ায় আমাকে আটক ও নির্যাতনও করা হয়েছে। একজন আশ্রয়প্রার্থীর মূল বিষয় হল জীবনের নিরাপত্তা, আমি জানি আমি রুয়ান্ডায় নিরাপদ থাকব না। যদি তারা আমাকে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করে তবে আমি সে দেশে পৌঁছে নিজেকে হত্যা করব।
তিনি আরো জানান, যখন ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি রুয়ান্ডা সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম তখনই আমি ভীষণ ভয় পেয়েছি।
গত সপ্তাহে আমি এসাইলাম সিকার হিসাবে নিয়মিত হাজিরা প্রদানের জন্য বার্মিংহামে রিপোর্ট করতে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে গ্রেপ্তার করে এবং আমাকে হাতকড়া লাগিয়ে দেয়। একই ঘটনা ঘটেছে আরও বিভিন্ন ‘জনের ক্ষেত্রে। যারা রিপোর্ট করতে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ইরাকি কুর্দিরাও ছিল যারা তাদের দেশে নির্যাতিত। আমাদের হাতকড়া দেওয়ার পর একটি ভ্যানে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার পায়ে সংক্রমণের কারণে আমি ডিটেনশন সেন্টারে একজন ডাক্তারকে দেখানোর চেষ্টা করছিলাম কারণ আমার অ্যান্টিবায়োটিক দরকার ছিল তবে এখন পর্যন্ত আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে সক্ষম হইনি।
রুয়ান্ডায় প্রেরণের উদ্দেশ্যে আটক বিভিন্ন অবৈধ অভিবাসী অনশন শুরু করেছেন বলে তথ্য অনুযায়ী জানা যায়। তারা বলেন, আমরা প্রতিবাদ স্বরুপ এই পন্থা বেছে নিয়েছি এবং আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছি।
কেয়ার ফর ক্যালাইসের আইন বিশেষজ্ঞ হান্না মারউড বলেছেন, ” আটককৃত অনেক শরনার্থী লোকেদের আশ্রয় দাবিগুলি প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করা হয় নাই যুক্তরাজ্যে।এমন অনেক কেইস রয়েছে যা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা যুক্তরাজ্যেই শরনার্থী মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। তাই এটি স্পষ্ট যুক্তরাজ্যের এই রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা কতটা লজ্জাজনক এবং কেন এটি বন্ধ করতে হবে। ”
লেবার দলের জাতীয় নির্বাচন ও প্রচারের সমন্বয়কারী প্যাট ম্যাকফ্যাডেন জানিয়েছেন, লেবার পার্টি যদি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে তাহলে তারা রুয়ান্ডায় পাঠানো আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাজ্যে আবারও ফেরত নিয়ে আসবে।
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, “ আমরা আমাদের দায়িত্বে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। প্রত্যেককে মর্যাদার সাথে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়। আটককৃত সকল ব্যক্তিদের একটি মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং ল্যান্ডলাইন টেলিফোন ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়। যাতে তারা বন্ধু, পরিবার এবং অন্যান্য সহায়তার জন্য যোগাযোগ রাখতে পারে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৬ মে ২০২৪