যুক্তরাষ্ট্রে চলমান সরকারি অচলাবস্থার (শাটডাউন) জেরে দ্বিতীয় দিনের মতো শনিবারও বিমান চলাচলে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট মিলিয়ে ১,৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে এবং কয়েক হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার প্রায় ৭ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ার পর শনিবারও প্রায় ৬ হাজার ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের বাইরে পরিচালিত হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার জানিয়েছে, বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে।
ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, শাটডাউনের কারণে বেতনহীন অবস্থায় কর্মরত বিমান নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে ক্লান্তি ও অনুপস্থিতি বেড়েছে। ফলে দেশের ৪০টি ব্যস্ততম বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অচলাবস্থা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউনের ৩৯তম দিন। কংগ্রেসে অর্থায়ন নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের দ্বন্দ্ব নিরসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
সরকার পুনরায় চালুর জন্য সমঝোতা খুঁজতে সিনেটররা সপ্তাহান্তেও আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে ইতোমধ্যেই বিমান চলাচল ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ায় এর প্রভাব সাধারণ আমেরিকানদের জীবনযাত্রায় সরাসরি পড়তে শুরু করেছে।
আমেরিকান এয়ারলাইনস এক বিবৃতিতে ওয়াশিংটনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, “অচলাবস্থা অবিলম্বে সমাধান করুন, নইলে দেশব্যাপী বিমান চলাচল ব্যবস্থায় অচলতা আরও বাড়বে।”
শনিবার নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে দেখা গেছে সবচেয়ে দীর্ঘ বিলম্বের রেকর্ড। স্থানীয় সময় বিকেল পর্যন্ত সেখানে ফ্লাইটগুলো গড়ে চার ঘণ্টার বেশি দেরিতে পৌঁছাচ্ছিল, আর ছাড়তেও দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগছিল।
সেদিন সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে শার্লট/ডগলাস ইন্টারন্যাশনাল, নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং শিকাগো ও’হেয়ার বিমানবন্দরে। এফএএ জানিয়েছে, জন এফ কেনেডি, আটলান্টা ও লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকেও গড়ে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে ফ্লাইট ছাড়ছে।
পরিবহন মন্ত্রী ডাফি জানিয়েছেন, শুধু বাণিজ্যিক নয়, ব্যক্তিগত জেট চলাচলেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। তিনি এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লিখেছেন, “ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোর চাপ কমাতে ব্যক্তিগত জেটগুলোকে ছোট বিমানবন্দর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।”
এফএএ সতর্ক করে জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনে ধাপে ধাপে ফ্লাইট কমানো হবে। শুক্রবার ৪ শতাংশ ফ্লাইট বাতিলের পর ১১ নভেম্বর ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয়, কারণ নিয়ন্ত্রকদের মানসিক চাপ ও শারীরিক ক্লান্তি দ্রুত বাড়ছে।
এদিকে ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি এজেন্সি (টিএসএ)-এর ৬৪ হাজার কর্মীর বেশিরভাগই বেতন ছাড়াই কাজ করছেন, যা বিমানবন্দর নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কার শাটডাউনে টিএসএ কর্মীদের প্রায় ১০ শতাংশ কাজ না করে ঘরে অবস্থান করেছিলেন। এবারও সেই আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশপথে এই অচলাবস্থা কেবল পরিবহন খাত নয়, পুরো অর্থনীতিকেই বিপর্যস্ত করে তুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কংগ্রেসের রাজনৈতিক অচলাবস্থা যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও তত বাড়ছে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

