14.8 C
London
November 24, 2024
TV3 BANGLA
বাকি বিশ্ব

সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া ২৭ বছর প্রবাসে, বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশি আবু বকর

ছেলেমেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ৩১ বছর আগে দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন আবু বকর। সেখানে গিয়ে চাকরি নেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর। এরপর একটিবারের জন্যও দেশে আসেননি, কর্মস্থলে নেননি এক দিনের ছুটিও। স্রেফ সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে। তার নিবেদন ফল দিয়েছে। তিন সন্তানের তিনজনই এখন প্রতিষ্ঠিত।

হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম হিউম্যানস অব কুয়ালালামপুরের বরাত দিয়ে আবু বকরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ৩১ বছর আগে দেশ ছেড়ে যাওয়া আবু বকর মালয়েশিয়ায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। টানা ২৭ বছর তিনি কাজ করেছেন। সাধারণ ছুটি দূরের কথা, সাপ্তাহিক ছুটিও নেননি তিনি।

আবু বকরের মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবারকে সহায়তা এবং ছেলেমেয়েদের প্রতিষ্ঠিত করা। তার পরিশ্রম সফল হয়েছে। তার এক মেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তার দুই ছেলের একজন চিকিৎসক, অপরজন প্রকৌশলী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন।

হিউম্যানস অব কুয়ালালামপুরকে আবু বকর বলেন, ৩১ বছর আগে তিনি শুনেছিলেন, মালয়েশিয়ায় প্রচুর কাজ, উপার্জনও বেশ ভালো। এরপর তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে এমন সব কাজ করেছেন, যা অন্যরা নিতে ইতস্তত করে। টানা ২৭ বছর মালয়েশিয়ায় থাকাকালে তিনি কর্মস্থলে এক দিনও ছুটি নেননি।

আবু বকর জানান, তিনি তার উপার্জনের প্রায় পুরো অর্থই দেশে পরিবারের কাছে পাঠাতেন, যাতে সন্তানদের ভরণপোষণ ও লেখাপড়ায় কোনো সমস্যা না হয়। তিনি প্রতি মাসে কী পরিমাণ আয় করতেন, তা অবশ্য জানাননি। তবে সরকারি তথ্য বলছে, মালয়েশিয়ায় একজন ক্লিনার বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মাসিক বেতন ১ হাজার ২০০ রিঙ্গিত বা ৪০০ মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশ মুদ্রায় প্রায় ৪৮ হাজার টাকা ছিল তার মাসিক আয়।

আবু বকর বলেন, ‘এখানে (মালয়েশিয়ায়) আসার পর থেকে আমি আর বাংলাদেশে একবারও যাইনি। আমি আমার পরিবারকে মিস করি, তারাও আমাকে মিস করে। কিন্তু আমি যা করেছি, তা আমার সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য করেছি।’

মালয়েশিয়ায় দৈনন্দিন জীবনযাপন বর্ণনা করে আবু বকর বলেন, ‘প্রতিদিন আমি ঘুম থেকে উঠি, গোসল করি, নাশতা করি, কাজে যাই, বাসায় ফিরি এবং দেশে পরিবারের সঙ্গে কথা বলি, তারপর বিশ্রাম নিই।’

আবু বকরের কঠোর পরিশ্রম বৃথা যায়নি। তার মেয়ে বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এবং তার দুই ছেলের একজন চিকিৎসক ও একজন প্রকৌশলী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানদের অর্জনে আমি সত্যিই সন্তুষ্ট।’

হিউম্যানস অব কুয়ালালামপুরের মতে, আবু বকর বাংলাদেশে ফিরে গেছেন তার পরিবারের কাছে। তিনি যখন দেশ ছাড়েন, তখন ছোট ছেলের বয়স ছিল মাত্র ৬ মাস। আবু বকরের জীবনের গল্প সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

একজন লিখেছেন, ‘কী অসাধারণ একজন আদর্শ মানুষ! পরিবারের প্রতি তার অটুট আস্থা ও ভালোবাসা তাকে এত বছর ধরে চালিয়ে নিয়ে গেছে।’ অপর একজন মন্তব্য করেছেন, ‘কোনো শ্রমের মর্যাদাই কম নয়। তারা নিজ হাতে পরিবারের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে দেন, সবার উচিত তাদের সম্মান করা।’

তবে এক নেটিজেন আবু বকরের সন্তানদের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘যদি আমি বিচারক, চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হতাম, তবে অনেক আগেই বাবাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতাম। সন্তানদের সফল করে তুলতে কোনো বাবা-মায়ের কষ্ট করা উচিত নয়।’

সূত্রঃ সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

এম.কে
২৬ অক্টোবর ২০২৪

আরো পড়ুন

চেভেনিং বৃত্তির আবেদন শুরু, যুক্তরাজ্যের ১৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা

‘মিক্সড মার্শাল আর্ট’ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, নিষিদ্ধ করল আফগানিস্তান

চীনের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো

অনলাইন ডেস্ক