5.3 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

সফরের এক ঘণ্টা কোথায় ছিলেন বিক্রম মিশ্রি!

গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় পা রাখেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই তিনি এসেছেন। দিনের শুরুতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব একান্ত বৈঠকে বসেন। পরে অনুষ্ঠিত হয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বাৎসরিক, স্টক টেকিং বা স্ট্রাকচার্ড আলোচনা। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা স্থায়ী ওই আলোচনা মধ্যাহ্নভোজের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।

আনুষ্ঠানিক আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট বিস্তৃত আলোচনা হয়। সেখানে গুরুত্ব পায় ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি। বৈঠকে অবশ্য শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠক বিষয়ে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরতে পরবর্তীতে দুই পররাষ্ট্র সচিব আলাদা আলাদা ব্রিফ করেন।

বৈঠক সূত্রে আগেই খবর পাওয়া যায়, বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন দিল্লির প্রতিনিধিরা। ঢাকার প্রতিনিধিরা ব্যাখ্যাসহ জবাব দিয়েছেন। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যায় বর্ডারে রক্ত ঝরা নিয়ে আলোচনা।

আলোচনায় উভয়ের তরফেই বলা হয় বাস্তবতা অস্বীকার করার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। বরং এতে সমস্যা বাড়বে। তাই উভয়ের যৌক্তিক কনসার্ন যত দ্রুত অ্যাড্রেস করা যাবে, ততই মঙ্গল।

সেগুনবাগিচায় কয়েক মিনিটের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধের অনুরোধ রেখে গেছেন ভারতীয় সচিব। ব্রিফিং শেষে চটজলদি বেরিয়ে যান ভারতীয় সচিব। এরপর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যা ব্যাপক মিডিয়া কভারেজ পায় উভয় দেশেই।

কিন্তু রহস্য সৃষ্টি হয়, সন্ধ্যার আগে সরকারি সব কর্মসূচি শেষ করা দিল্লির বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি পরবর্তী ক’ঘণ্টা কোথায় কি বৈঠক করলেন। বিশেষ করে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ থেকে ৮টা ৩৫ পর্যন্ত এই এক ঘণ্টা কোথায় ছিলেন তিনি। কার সঙ্গে দেখা করলেন তিনি ও তার দু’জন সফরসঙ্গী।

বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বিক্রম মিশ্রি একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিলেন ঢাকা সেনানিবাসে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং বৈঠকটি হয় তার। সেই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে জানা ও বুঝার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এটা নিশ্চিত করেছে যে, সেনানিবাসস্থ বাসভবনে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

সেই সাক্ষাৎ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরা পরবর্তীতে বিস্তারিত অবহিত হয়েছেন। যেটুকু জানা গেছে সম্পর্কে মেঘ দূর করার বিষয়ে ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষত দূরে থেকে বিদেশ সচিব বা দিল্লি যা ভাবছিল বাংলাদেশ সফর করে একটি ইতিবাচক ধারনা নিয়েই ফিরেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মাস ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে যা ঘটেছে তা ৫২ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু ৫ই আগস্ট বাংলাদেশে রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর ভারতের সেই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঠুনকো কিছু ঘটনা নিয়ে শোরগোল ফেলে দেয় ভারতীয় মিডিয়া। একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করানো হয়।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে টার্গেট করে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা হচ্ছে এমন একটা সুর তুলে সীমান্তের ওপারে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানো হয়। আক্রমণ হতে রক্ষা পায় নাই বাংলাদেশের মিশনও। ভারতীয় রাজনীতিবিদরা অহেতুক, অপ্রয়োজনীয় বাক্যবাণে বাংলাদেশের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা করেন! শান্ত বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাবও করে বসেন মমতা ব্যানার্জি।

উল্লেখ্য যে দিল্লির সমর্থনে বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ে চেপে বসা শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের শোচনীয় পতন হয়েছিল ৫ আগস্ট। জনরোষ থেকে প্রাণে বাঁচতে হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমানে ভারত হতেই শেখ হাসিনা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে যাচ্ছেন যা নিয়ে নাখোশ ইউনুস সরকার।

সব আলোচনা-সমালোচনা তথা সম্পর্কের চরম টানাপড়েনের মুহূর্তেই ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

সূত্র ও খবরঃ মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’।

এম.কে
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

ভারতকে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে হবেঃ ড. ইউনুস

ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক

নিউজ ডেস্ক

সময় টেলিভিশনের সম্প্রচার এক সপ্তাহ বন্ধের নির্দেশ