ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্লট দুর্নীতি সংক্রান্ত তিন মামলায় সাত বছর করে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার আগে বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন পর্যবেক্ষণে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আচরণ নিয়ে তীব্র বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “তার সম্পদের প্রতি এত লোভ!”
রায়ে শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পৃথক দুটি মামলায় পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডও যুক্ত করা হয়েছে।
বিচারক জানান, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক জোন থেকে মোট ৬০ কাঠা জমির ছয়টি প্লট নিজের ও পরিবারের নামে অবৈধভাবে বরাদ্দ নিতে শেখ হাসিনা রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম করেছেন। বিধিবহির্ভূতভাবে আবেদন ছাড়াই বরাদ্দ সুপারিশ, অকার্যকর হলফনামা জমা এবং প্রকল্পের নিয়ম ভঙ্গ করেই জমি নেওয়া হয়েছিল বলে আদালতে উপস্থাপিত তথ্যপ্রমাণে উঠে আসে।
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, শেখ হাসিনার কোনো আবেদন না থাকা সত্ত্বেও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের নির্দেশে বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর রাজউক বোর্ড নিয়ম লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনার অনুকূলে সুপারিশ করে। “তিনি আবেদন ছুড়ে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজে প্লট বুঝে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন—এটাই তার অভিপ্রায় পরিষ্কার করে,” মন্তব্য করেন বিচারক।
রায়ের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়, যার মূল্য নির্ধারিত হয় কাঠাপ্রতি তিন লাখ টাকা। অকার্যকর হলফনামার ভিত্তিতে জারি করা অস্থায়ী বরাদ্দপত্র, নামমাত্র মূল্যে মূল্য পরিশোধ এবং দ্রুত লিজ নিবন্ধনের আবেদনকে আদালত “প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার” হিসেবে চিহ্নিত করে।
পর্যবেক্ষণে আরও উঠে আসে, নিজের প্লট পাওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মাথায় শেখ হাসিনা ছেলে সজীব ওয়াজেদ এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্যও প্লটের সুপারিশ করেন। এরপর বোন ও অন্যান্য স্বজনের জন্যও একের পর এক রিকমেন্ডেশন পাঠান। বিচারকের মন্তব্যে প্রতিফলিত হয় এই আচরণে তিনি “নৈতিকতার বিচ্যুতি” করেছেন।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, তিন মামলায় মোট ২৩ জন আসামি থাকলেও অধিকাংশই একাধিক মামলায় অভিযুক্ত। তদন্ত শেষে গত মার্চে দুদক অভিযোগপত্র দেয় এবং চলতি বছরের জুলাইয়ে আদালত অভিযোগ গঠন সম্পন্ন করে। মাত্র চার মাসের মধ্যে যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা করা হলো।
এ রায়ের আগে গত ১৭ নভেম্বর গণঅভ্যুত্থান দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দুর্নীতি মামলায় সর্বশেষ দণ্ডের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবেক সরকারপ্রধান, যিনি দুর্নীতি মামলায় সাজার রায় পেলেন।
সূত্রঃ বিডি নিউজ ২৪
এম.কে

