19.1 C
London
May 25, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

সরকারি জমি দখলে ভারতীয় নাগরিককে ব্যবহার, অভিযুক্ত আওয়ামীলীগের এমপি

ফরিদপুরে সংখ্যালঘুদের নাম ব্যবহার করে এবং ভারতীয় এক নাগরিককে ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ে উপস্থাপন করে সরকারি অর্পিত সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝর্না হাসানের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দায়ের হওয়া এক মামলায় উঠে এসেছে, ঝর্ণা হাসান ও তার মৃত স্বামী ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান হাসিবুল হাসান লাভলু দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের জমি ও সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে আসছেন। এবার সেই চেষ্টায় নতুন মোড়—ভারতের নাগরিক বীরেশ চন্দ্র চক্রবর্তীকে বাংলাদেশি পরিচয়ে হাজির করে ফরিদপুর শহরের কোতোয়ালি থানাধীন দক্ষিণ আলীপুরের ২২ শতাংশ জমি নিজেদের করে নেওয়ার ষড়যন্ত্র।

মামলার বাদী অচিন্ত কুমার চক্রবর্তীসহ পাঁচজন অভিযোগ করেন, তারা সরকারি লিজকৃত জমিতে ৫৪ বছর ধরে বসবাস করছেন। ওই জমির মূল মালিক দীনেশ চন্দ্র সমাদ্দার স্বাধীনতার আগে ভারতে চলে যাওয়ায় তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকার ‘ভেস্টেট প্রপার্টি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। পরে তা বাদীদের নামে সরকার লিজ দেয়।

কিন্তু জমিটি হাতিয়ে নিতে ননী বালা দেবী নামে এক গৃহকর্মীকে ওয়ারিশ সাজিয়ে জমির রেকর্ড পরিবর্তনের চেষ্টা চলে দীর্ঘদিন। ২০০৮ সালে হাসিবুল হাসান লাভলুর মৃত্যুর পর স্ত্রী ঝর্ণা হাসান বিষয়টি তদারকি করতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভারতীয় নাগরিক বীরেশ চন্দ্রকে বাংলাদেশি সাজিয়ে স্থানীয় জরিপ অফিস, তহশিল অফিস ও ভূমি অফিসে প্রভাব খাটিয়ে জমির নামজারি ও দখলের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, বীরেশ চন্দ্র চক্রবর্তীর নামে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে তাকে অর্পিত সম্পত্তির মালিকের ‘ওয়ারিশ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফরিদপুর ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল থেকে জাল ডিক্রি নিয়েও সম্পত্তি দখলের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। বাদীরা আদালতে জমি বিক্রি ঠেকাতে ও তদন্ত চেয়ে আবেদন করলেও এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো আদেশ মেলেনি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সাবেক এমপি ঝর্ণা হাসান বর্তমানে পলাতক থাকলেও প্রশাসনের একাংশকে ব্যবহার করে এখনো জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয় এসি ল্যান্ড শফিকুল ইসলাম এবং কয়েকজন জরিপ কর্মকর্তা জালিয়াতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলেও মামলায় উল্লেখ রয়েছে। এমনকি স্থানীয় সাংবাদিক নেতা কবির আহমেদের নামও এসেছে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে।

২০১৫ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি তদন্ত প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়, হাসিবুল হাসান লাভলু ও তার পরিবার কর্তৃক দখল করা জমির রেকর্ড ছিল ভুয়া। তবুও দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক স্তরে এসব অনিয়ম চলতে থাকায়, স্থানীয় সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর নিরাপত্তা ও জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

বাদীরা বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিচয়কে পুঁজি করে একদিকে যেমন অর্পিত সম্পত্তির দখল চেষ্টায় সুবিধা নেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ভারতীয় নাগরিককে ব্যবহার করে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভূমি থেকে উৎখাতের চেষ্টা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা বড় ভূমিকা রাখছে।

ফরিদপুরে সরকারি জমি দখলের এই জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনায় সাবেক এমপির প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার অভিযোগ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসন প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের জমি দখল ও পরিচয় জালিয়াতির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

সূত্রঃ কালেরকন্ঠ

এম.কে
২৫ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

আশ্রয়ের খোঁজে সিলেট আ.লীগের পলাতক নেতারা, কেউ অপেক্ষায় আত্মসমর্পণের

কোটা আন্দোলন রুপ নিয়েছে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে, কি ঘটতে চলেছে বাংলাদেশে?

নিউজ ডেস্ক

চিকিৎসার জন্য আমেরিকা যাচ্ছেন খালেদা জিয়া