TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

সহায়তাপ্রাপ্ত আবাসন আইন ঝুলে থাকায় ইংল্যান্ডে বাড়ছে মৃত্যু ও শোষণের অভিযোগ

ইংল্যান্ডে অনিয়ন্ত্রিত সহায়তাপ্রাপ্ত আবাসনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জীবন আজও মারাত্মক অনিশ্চয়তায় রয়েছে। আইন পাসের দুই বছর পার হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় অনিরাপদ বাসস্থানে মানুষ মারা যাচ্ছে এবং একাধিক আবাসিক এলাকা স্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়ছে—এমন গুরুতর অভিযোগ তুলেছে দাতব্য সংস্থা ও আইনপ্রণেতারা।

 

২০২৩ সালে কনজারভেটিভ এমপি বব ব্ল্যাকম্যানের আনা সাপোর্টেড হাউজিং অ্যাক্ট ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে রাজকীয় অনুমোদন পেলেও প্রয়োজনীয় বিধিমালা না থাকায় এখনো কার্যকর হয়নি। আইনটি মূলত ‘এক্সেম্পট’ সহায়তাপ্রাপ্ত আবাসনের নামে চলমান দুর্নীতি ও শোষণ ঠেকানোর উদ্দেশ্যে প্রণীত হলেও বাস্তবায়নের বিলম্বে তার সুফল মিলছে না।

এই ‘এক্সেম্পট’ আবাসন ব্যবস্থায় কিছু অসাধু মালিক হাউজিং বেনিফিটের উচ্চ হারের সুযোগ নিয়ে বিপুল অর্থ আয় করছেন। বিনিময়ে তারা সদ্য কারামুক্ত ব্যক্তি, মাদকাসক্ত, পারিবারিক সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা নারী ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা মানুষদের জন্য নিম্নমানের, অনিরাপদ ও গাদাগাদি করা বাসস্থান দিচ্ছেন, যেখানে কার্যকর কোনো সহায়তা প্রায় নেই।

সরকার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইনটির অধীনে নতুন বিধিমালা নিয়ে পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু করলেও এখনো তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেনি। ফলে আশঙ্কা বাড়ছে যে, আইনটি পুরোপুরি কার্যকর হতে আরও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।

এমপি বব ব্ল্যাকম্যান এই বিলম্ব নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার ভাষায়, দুই বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে থাকায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিজ নিজভাবে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে কোনো সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ নেই। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের দৃঢ় উদ্যোগের অভাবে অসাধু মালিকরা আরও বেশি সম্পত্তি দখলে নিচ্ছে এবং নির্বিঘ্নে অর্থ কামাচ্ছে।
দাতব্য সংস্থা ক্রাইসিস জানায়, এক্সেম্পট আবাসন নিয়ে তারা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার তথ্য পেয়েছে। ইঁদুর ও ছত্রাকে ভরা কক্ষ, অস্বাভাবিক সংখ্যক মানুষের জন্য একটি মাত্র ধোয়ার মেশিন এবং অভিযোগ তুললেই হুমকি ও হয়রানির মতো ঘটনা সেখানে নিত্যদিনের বাস্তবতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের একসঙ্গে শেয়ারড হাউসে রাখার ফলে মাদকাসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে। একই সঙ্গে সহিংসতা, অসামাজিক আচরণ এবং জরুরি সেবার ওপর চাপও বাড়ছে।

এই সংকট সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে বার্মিংহামে। শহরটিতে প্রায় ৩০ হাজার এক্সেম্পট আবাসন রয়েছে। সেখানে বহু পারিবারিক বাড়িকে আট বা নয় শয্যার শেয়ারড বাসস্থানে রূপান্তর করা হয়েছে, কারণ এতে হাউজিং বেনিফিট থেকে বেশি আয় সম্ভব।

মিউজিয়াম অব হোমলেসনেস–এর ‘ডাইং হোমলেস প্রজেক্ট’ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে অন্তত ১০টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এলাকায় এক্সেম্পট আবাসনে ৩৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। তবে অধিকাংশ কাউন্সিল এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ না করায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রকল্পটির প্রধান গিল টেলর বলেন, এসব মানুষ প্রায় অদৃশ্য অবস্থায় মারা যাচ্ছে। তারা যথাযথ সহায়তা পাচ্ছিল কি না, কিংবা অনিরাপদ আবাসনই মৃত্যুর কারণ হয়েছে কি না—তা নির্ধারণ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

কিছু স্থানীয় কাউন্সিল এক্সেম্পট আবাসনের বিস্তার ঠেকাতে নিজস্ব নিয়ম চালু করলেও তা অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলোর লাগাম টানতে যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বার্মিংহামে এই খাতটি মূলত পাঁচটি বড় প্রতিষ্ঠানের দখলে, যাদের সবাইকে সামাজিক আবাসন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘অননুগত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

সম্প্রতি দেউলিয়া হওয়া মিডল্যান্ড লিভিংস সিআইসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বাসিন্দাদের রক্ষায় প্রহরী নিয়োগ করতে হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাসিন্দাদের ভয় দেখিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য করেছে, হঠাৎ উচ্ছেদ করেছে এবং অবৈধভাবে ঘরে প্রবেশসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল।

এ বিষয়ে হাউজিং, কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাদের দাবি, আগামী মাস থেকেই সাপোর্টেড হাউজিং অ্যাক্ট বাস্তবায়ন শুরু হবে, ন্যূনতম মানদণ্ড ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করা হবে এবং আবাসনে বসবাসকারীদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

লকডাউনে চরম অর্থ সংকটে ব্রিটেনের পাবগুলো

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে লেবার সরকারের নতুন আশ্রয় পরিকল্পনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক

আকিল মাহদী হত্যাকাণ্ডে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

অনলাইন ডেস্ক