কলকাতায় কালীপূজার আনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসানের অংশ নেওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক তুঙ্গে। এ নিয়ে সাকিবের বিপক্ষে অনেক সমালোচনা হয়েছে ফেসবুকে, একজন আবার তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে র্যাবের হাতে আটকও হয়েছেন। একইসঙ্গে অভিযোগ উঠেছে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমের প্রচার প্রক্রিয়ার ভূমিকা নিয়েও।
দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রচার মাধ্যমগুলোতে সাকিবের হঠাৎ ভারত ভ্রমণ প্রসঙ্গে লিখা হয়, কালীপূজা উদ্বোধন করতে কলকাতায় গেছেন তিনি। পরে আবার সাকিবকে লাইভে উপস্থিত হয়ে বলতে শোনা যায়, তিনি পূজা উদ্বোধনের উদ্দেশ্যে যাননি, বরং গিয়েছেন অতিথি হিসেবে।
এরইমধ্যে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয় বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ক্রিকেটারকে। ফেসবুক লাইভে দা উঁচিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে হত্যার হুমকি দেন সিলেটের এক তরুণ। পরে তাকে আটক করা হয়।
এদিকে ওই পূজা কমিটির প্রধান উদ্যোক্তা ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পরেশ পাল এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মি. আল হাসান তাদের পূজোর উদ্বোধন কখনই করেন নি। তাই মুসলমান হয়েও হিন্দুদের পূজায় কেন হাজির ছিলেন, সেই প্রশ্ন তুলে তার সমালোচনা করা অন্যায্য।
অন্যদিকে পূজার দাওয়াত কার্ডের বক্তব্যের বরাতে বলা হয়, উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় মহানাগরিকও রাজ্যের মন্ত্রী জনাব ফিরহাদ হাকিম, এছাড়া উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য ক্রিকেটার জনাব সাকিবুল হাসান।
সব মিলিয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতে পরতে হয় জনগণকে। ফেসবুকে একজন লিখেছেন,
সে অন্যকে গালিগালাজ, হুমকি দিয়েছে মানলাম, এটা তার অপরাধ।
কিন্তু কিছু পত্রিকা অন্যের ব্যাক্তিগত পাসপোর্টের কপি অনলাইনে দিয়েছেন। এটাওত অপরাধ হওয়া উচিত।
দেশ সেরা একজন খেলোয়ার বহুদিন মাঠের বাইরে থাকার পর যখন মাঠে নামতে যাচ্ছেন, এমন সময় নিয়ে এ ধরনের প্রচারনা সাকিবকে অনেক বেশি মানসিক চাপে দিচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন অনেকে। বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমগুলোর ভূমিকাটা এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের একজন বিভাগীয় সম্পাদক নাম প্রকাশ না শর্তে টিভিথ্রিকে জানান, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সাংবাদিকদের দায় রয়েছে। কিন্তু এটাও সত্য আমাদের দায়িত্ব সত্য খবরকে প্রচার করা। সমাজের প্রতি একটা দায়িত্ব রয়েছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানুষকে উস্কে না দেয়া।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর চাপ থাকে ‘ভিউ বেশি পাওয়া’ নিয়ে। সংবাদগুলো হয়তো তারা নীতির ভেতরে থেকেই পরিবেশন করে। আসলে ব্যাপারটা নির্ভর করে পাবলিক ঘটনাটি কোন এঙ্গেলে গ্রহণ করছে। এরপর শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা। এভাবে দেখা গেছে, সংবাদমাধ্যমগুলোর নিউজের কারণে অনেক উস্কানিমূলক ঘটনা ঘটেছে। ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের পুরো বিষয়টি তারই একটি উদাহরণ।
সাকিব আল হাসানকে মিডিয়ার ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত এই বিষয়ে তিনি বলেন, কেরিয়ারের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সাকিবকে নিয়ে মিডিয়ায় যা হচ্ছে তা অতি বাড়াবাড়ি। তাকে এই মানসিক চাপে ফেলার জন্য মিডিয়া অবশ্যই দায়ি। তার আগমনের এই সময়টাতে তার পাশে থাকা উচিত মিডিয়ার সবার।
১৯ নভেম্বর ২০২০
টিভিথ্রি বাংলা