পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের বড় শহরগুলোর এই ভোট নিয়ে চিন্তামুক্ত হতে পারছে না দলটি। কারণ পাঁচ সিটির মধ্যে চারটিতেই অভ্যন্তরীণ বিরোধ স্পষ্ট। দলের প্রার্থীর পক্ষে এখনো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামেননি মনোনয়নবঞ্চিতরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন সংশয়ে। কোথাও কোথাও পক্ষে বিপক্ষে মিছিলও হচ্ছে। ফলে নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত এবং তাদের অনুসারীদের নৌকার পক্ষে মাঠে নামানোই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, যারা মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তাদের গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা এবং বিতর্কমুক্ত কি-না সেটা বিবেচনা করেই প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। শুরুতে কিছুটা বিভেদ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।
জানা যায়, গাজীপুরে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পরেও নির্বাচনি মাঠে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাজশাহীতে খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে মাঠে নেই ডাবলু সরকার ও তার অনুসারীরা। সিলেটে মনোনয়নবঞ্চিতরা আনোয়ারুজ্জামানকে সহযোগিতা করবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বরিশালে মেয়র প্রার্থীর পক্ষে হয়েছে মিছিল, শোডাউন। করা হয়েছে মিষ্টি বিতরণ। তবে পাঁচ সিটির মধ্যে সবচেয়ে নির্ভার আছেন খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক ও সবচেয়ে চিন্তিত সিলেটের মেয়র প্রার্থী। আওয়ামীলীগের দলীয় লোকেদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি না থাকায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যোগ্যতা, দক্ষতা, জনপ্রিয়তা এবং বিভিন্ন জরিপ বিবেচনায় নিয়ে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তৈরি হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশীও বেশি থাকে। এটা খারাপ কিছু নয়। আমরা তাদের বুঝিয়ে বসানোর চেষ্টা করি। ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও দলের সিদ্ধান্তের পর বেশির ভাগই বসে যান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে থেকে যান। কারণ আমরা তো কাউকে নির্বাচন করতে বাধা দিতে পারি না।
আনোয়ারুজ্জামান সিসিক নির্বাচনে মেয়র হিসাবে মনোনয়ন পেতে পারেন দলের এমন গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে মাঠে নামার পরও সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র কোনো নেতাকে পাশে পাননি। যদিও জেলা ও মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা আনোয়ারুজ্জামানের পাশে রয়েছেন শুরু থেকেই। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এই নেতাকে ঠেকাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে ১০ জন নৌকার মাঝি হতে চেয়েছিলেন। ঘোষণা ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে তাকে জয়ী করতে এক হয়ে কাজ করবেন সবাই। কিন্তু আনোয়ারুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর পরই গুমোট একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে স্থানীয় রাজনীতিতে। যদিও মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক নেতাই দলের হাই কমান্ডের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তবে আদৌ তারা মন থেকে আনোয়ারুজ্জামানকে সহযোগিতা করবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
এদিকে চাচা খোকন সেরনিয়াবাতের ব্যাপারে ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহর মনোভাব এখনো পরিষ্কার নয়। খোকনের পক্ষে নির্বাচনি মাঠে সাদিক বা তার অনুসারীরা কতটা আন্তরিকভাবে নামবেন তা পরিষ্কার নয়। এখন সব পক্ষের নেতাকর্মীদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামানোই বড় চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের। দলীয় একটি সূত্র জানায়, বরিশালের রাজনীতিতে এতদিন প্রকাশ্যে গ্রুপিং খুব একটা চোখে পড়েনি। কিন্তু এবার মেয়র প্রার্থী পরিবর্তনের পরে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। সরাসরি কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানা যায়।