সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমদাদ হোসেন চৌধুরী মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে নগরীর বারুতখানা এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে বিএনপির ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছিলেন। সন্ধ্যায় যখন মাগরিবের নামাজের বিরতি হয় তখন ইমদাদ হোসেন চৌধুরী তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনটি টেবিলে রেখে নামাজে চলে যান। নামাজে থাকাকালে তার মুঠোফোনে রিং বেজে উঠলে ডিসপ্লেতে দেখা যায় ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’।
এসময় মিটিংয়ে থাকা কয়েকজন দৃশ্যটি মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করে ফেলেন। সেটি ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্নজনের মোবাইল ফোনের হোয়াটসাঅ্যাপে।
এ খবর জানাজানি হওয়ার পর বিএনপি রাজনীতিতে নানা কানাঘুষা ও কৌতূহল দেখা দেয়। রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়া কৌতূহল থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, আনোয়ারুজ্জামনের সঙ্গে বিএনপি নেতার যোগসাজশ রয়েছে। এ জন্য যুক্তরাজ্য সময় অনুযায়ী সকালবেলা বিএনপি নেতা ইমদাদকে ফোন করে দিনের খবর নিচ্ছিলেন। সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়েছে ‘আনোয়ারুজ্জামান ইউকে’ কল করার ছবি ও মেয়র থাকাকালে আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে ঘনিষ্টতার বিভিন্ন ছবি।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মূলত: আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার একজন নেতা। ২০২৩ সালের ২১ জুন অনুষ্ঠিত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেখ রেহানার মনোনীত হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আনোয়ারুজ্জামানের মেয়র বাসভবন ভাঙচুর হয়। ওই দিন তিনি আত্মগোপনে চলে যান। অন্তবর্তী সরকারের আদেশে মেয়র পদ থেকে তাকে অপসারণ করা হলে আনোয়ারুজ্জামানকে দেখা যায় তার পুরোনো আবাসস্থল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। সেখানে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। পাশাপাশি ফোনে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন। ৫ আগস্টের পর সিলেটে তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে।
সিলেট মহানগর বিএনপি নেতা ইমদাদের ফোন নম্বরে কল দেওয়ায় এবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাসাজশ নিয়ে আলোচনা চলছে।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। নগরীর আম্বরখানায় নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইমদাদ বলেন, ‘মঙ্গলবার (২০ মে) বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে বারুতখানার একটি রেস্টুরেন্টে বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ব্যবসায়ী সমিতির একটি মতবিনিময় সভা ছিল। এ সভা চলাকালীন ছবি তোলার জন্য আমার মোবাইল ফোনটি ছিল আমার সব সময় সঙ্গে থাকা আখতারের কাছে।
মতবিনিময়ের পর আমরা মাগরিবের নামাজ পড়ে গাড়িযোগে আম্বরখানা যাওয়ার সময় আরিফ নামে একজন আমাকে কল দিয়ে বলেন, আমার ফোনে নাকি আনোয়ারুজ্জামানের কল এসেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের কল লিস্ট খতিয়ে দেখি ৬টা ৫১ মিনিটে একটি কল দেখাচ্ছে। এতে আমি অবাক হই এবং বিষয়টি আখতারকে জিজ্ঞেস করি। তখন আখতার আমাকে বলে, তার কাছে আমার ফোন থাকাকালে সিলেট বিমানবন্দর থানা শাখার সদস্যসচিব সরোয়ার ও মহানগর বিএনপির সভাপতির পিএস ইমন তাকে ডেকে একটি স্থানে বসিয়েছে এবং এসময় আমার ফোনের ডিসপ্লের ছবি তুলেছে, এর বেশি আখতার আর কিছু জানে না।’
এসময় ইমদাদ হোসেন চৌধুরী আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে ডেভিল আনোয়ারুজ্জামান দ্বারা আমি ও আমার দলের অসংখ্য নেতাকর্মী অনেকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। এসবের পরও আমি কীভাবে আমি আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে ফোনে কথা বলব? প্রশ্নই আসে না এমনটি করার। যারা আমার ইমেজকে নষ্ট করার জন্য এমন ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ঘটনা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ইমদাদ আরও বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না কী ঘটেছে। আমি লন্ডন থাকা অবস্থায় আনোয়ারুজ্জামানের ফোন নম্বারটি স্টোর হতেও পারে। তবে আমার কথা হয়নি কোনোদিন। আজকের ঘটনা কী সেটিও বলতে পারছি না। আনোয়ারুজ্জামান কল করেছেন নাকি ষড়যন্ত্রকারীরা কোনো ডিভাইস দিয়ে এমনটি করেছে বুঝতে পারছি না।’
সূত্রঃ খবরের কাগজ
এম.কে
২০ মে ২০২৫