বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেটের অর্থনীতির অন্যতম বড় চালিকাশক্তি পর্যটনশিল্প। অন্তত ১০ হাজার মানুষ সরাসারি পর্যটন খাতের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু করোনা প্যানডেমিকের কারণে প্রায় চার মাসেরও বেশি সময় ধরে সংকটের মধ্যে এই মানুষগুলো। পর্যটন কেন্দ্রগুলো জনশূন্য হয়ে পড়ে থাকায় আয় নেই তাদের।
এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনার কারণে গত মার্চের মধ্যভাগ থেকে সিলেটের পর্যটনে ধাক্কা লাগে। যার ফলে বিভিন্ন হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেখা দিয়েছে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সংকট।
স্বাভাবিক সময়ে পর্যটকে ভরপুর থাকে সব হোটেল ও রেস্ট হাউজ। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যটক না থাকায় সব হোটেল, মোটেল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছাঁটাই হওয়া কর্মচারীরা পড়েছেন অথৈ পাথারে। একই অবস্থা রেস্টুরেন্টগুলোর কর্মচারীদেরও।
জাফলং, পাংথুমাই, লালাখাল, সাদাপাথর, বিছনাকান্দিসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যারা নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন, পর্যটক না থাকায় তারাও এখন গভীর সংকটে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেসব দোকানপাট, রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে, সেগুলোও এখন বন্ধ।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পর্যালোচনা বলছে, করোনাকালে সিলেটের পর্যটন খাতে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হচ্ছে। সে হিসাবে গত চার মাসে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০০ কোটি টাকা।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, সিলেটের পর্যটন খাতকে ঘিরে হোটেল, রেস্ট হাউজ, পরিবহন, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা জড়িত। এসব ব্যবসা করোনার কারণে এখন গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতি কাটার পরও পর্যটন খাত স্বাভাবিক হতে দীর্ঘ সময় লাগবে। আর্থিক সক্ষমতায় যে ধাক্কা লেগেছে, মানুষ সেটা থেকে আগে বেরিয়ে আসতে চাইবে। এরপর ভ্রমণের চিন্তা করবে।
এদিকে শাহজালাল মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অনেক ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে এই মাজার সংলগ্ন এলাকায় ভিন্ন জেলা হতে ঘুরতে আসা লোকদের দেখা মিলছে না। এ কারণে মাজারের চারপাশে গড়ে উঠা ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় নেমেছে ধস।
শাহজালাল মাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কবির চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। অনেক ব্যবসায়ী দোকানভাড়া দিতে পারছেন না। আমরা সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই দ্রুত সবকিছু খুলে দিয়ে আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। তা নাহলে আমরা এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব না।
স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী বলেন, করোনাভাইরাস যেমন আমাদের স্বাভাবিক জীবনে আঘাত হেনেছে ঠিক তেমনি ক্ষতি করেছে অর্থনৈতিক ভাবেও। আমরা এখন যদি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে না পারি, পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয় তাহলে আমরা বিলীন হয়ে যাব।
২১ আগস্ট ২০২০
এমকেসি/এনএইচটি