4 C
London
January 22, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশসিলেট

সিলেটের ‘মাটির বিস্কুট’ খুঁজেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারীরাও

চারকোনা আকৃতির আধাপোড়া মাটির টুকরো। দেখতে অনেকটা বিস্কুটের মতো। সিলেট নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকায় ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে এই মাটির বিস্কুট। সিলেটের লোকজন এটাকে ‘ছিকড়’ নামেই চেনেন। একসময় দরিদ্র অভাবী লোকজন বিকল্প খাবার হিসেবে খেতেন মাটির এই বিস্কুট। এরপর বিভিন্ন নানা নিয়ে এই ‘ছিকড়’ খেতে শুরু করেন নারীরা। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা নিজের এবং গর্ভস্থ বাচ্চার সুস্থতার জন্য খেয়ে থাকেন অদ্ভুত এই বিস্কুট।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সিলেটের অনেক নারীও দেশ থেকে নিয়ে যান এই ‘ছিকড়’। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, মাটির তৈরি এই বিস্কুটে কোন পুষ্টিগুণ নেই। বরং গর্ভাবস্থায় আধপোড়া মাটির এই বিস্কুট খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় গ্রামের অভাবগ্রস্থ লোকজন বিকল্প খাবার হিসেবে মাটির তৈরি এই বিস্কুট খেতেন। ‘ছিকড়’ মূলত তৈরি হয় এঁটেল মাটি দিয়ে। ‘ছিকড়’ তৈরির কারিগররা প্রথমে পুকুর বা জলাভূমির তলদেশের গভীর থেকে কিংবা পাহাড় ও টিলার গভীর থেকে গন্ধযুক্ত মাটি সংগ্রহ করেন। এরপর তা চারকোনা বিস্কুট আকৃতি দিয়ে রোদে শুকিয়ে নেন। শুকিয়ে শক্ত হওয়ার পর মাটির বিস্কুটগুলো আগুনে পুড়য়ে খাবার উপযোগী হয়।

‘ছিকড়’ শব্দটি এসেছে ফারসি ভাষা থেকে। ‘ছিয়া’ অর্থ কালো, আর ‘কর’ অর্থ মাটি। অর্থাৎ ‘ছিয়াকর’ অর্থ কালো মাটি। ‘ছিয়াকর’ শব্দটি কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে সিলেটের মানুষের কাছে কালো এঁটেল মাটির তৈরি বিস্কুটটি ‘ছিকড়’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে।

‘ছিকড়’ একসময় হবিগঞ্জের তৈরি হতো। হবিগঞ্জ জেলার মানুষের কাছেই বেশি পরচিত ছিল মাটির এই বিস্কুট। বিশেষ করে জেলার দরিদ্র মানুষের বিকল্প খাবার হিসেবে এই ছিকড়ের কদর ছিল। ধীরে ধীরে মানুষের স্বচ্ছলতা ফিরলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এই বিশেষ খাবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সিলেট বিভাগের বাকি তিন জেলার মানুষের কাছেও। রক্তস্বল্পতারোধ ও গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতার উপশমসহ নানা বিশ্বাসে সিলেট বিভাগের নারীরা এই অদ্ভূত বিস্কুটটি খেতেন।

বয়স্ক নারীরা জানান, গর্ভাবস্থায় নারীরা খাবার খেতে পারেন না। খাবারে গন্ধ লাগে। খাবার সামনে আসলে অনেকের বমি বমি ভাব হয়। কারও কারও রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়। এতে গর্ভবর্তী নারীরা দুর্বল হয়ে পড়েন। এসময় গর্ভবতী নারীদের ‘ছিকড়’ খেতে দেওয়া হয়। তেঁতুল কিংবা টক জাতীয় কিছু মিশিয়ে নারীরা এই বিস্কুটটি খেয়ে থাকেন। বিকল্প খাবার হিসেবে গর্ভবতী নারীরা এই বিস্কুট খেয়ে থাকেন। অনেক পরিবারে গর্ভবর্তী নারীদের সাথে সুস্থ নারীরাও এই ‘ছিকড়’ খেয়ে থাকেন। এই বিস্কুট নারীদের অনেক রোগ প্রতিরোধ করে থাকে এমন বিশ্বাস থেকেই তারা এটি খান।

চাঁদনীঘাটের ‘ছিকড়’ বিক্রেতা হাফিজুর রহমান জানান, বংশ পরম্পরায় তিনি এই ‘ছিকড়’ বিক্রি করে আসছেন। বেশিরভাগ ক্রেতাই নারীরা। এই বিস্কুট খেলে গর্ভবতী নারী ও শিশু উভয় সুস্থ থাকেন এমন বিশ্বাস থেকে এটি কিনেন ক্রেতারা। অনেক সময় যুক্তরাজ্যে পাঠানোর জন্য কেউ কেউ এই বিস্কুট কিনে প্যাকেট করে নেন।

উপশহরের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম জানান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী তার দাদীর জন্য বছরে দুই-তিনবার ‘ছিকড়’ পাঠিয়ে থাকেন। প্রতিদিন ‘ছিকড়’ খাওয়া তার দাদীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে জানান তিনি।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত জানান, মাটির তৈরি এই বিস্কুটের প্রমাণিত কোন পুষ্টিগুণ নেই। নারীরা অন্ধবিশ্বাসে এটি খেয়ে থাকেন। এটি গর্ভবতী নারীর উপকারের চেয়ে ক্ষতি করার আশঙ্কা থাকে।

এম.কে
২২ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আ.লীগ নেতা হানিফের অভিনন্দন

১৩ বছর আইনি লড়াই শেষে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত প্রেমিকের সঙ্গে কারাগারে বিয়ে!

‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের’ আহ্বায়কসহ গ্রেপ্তার ১৯