সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমানকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, এই খবরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতিশীল ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত সুফিউর রহমানকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার প্রস্তাবে বিস্ময় প্রকাশ করছেন তারা।
সুফিউর রহমান নবম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রদূতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বাসযোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগ দেন। তিনি তার ব্যাচের পদক্রম তালিকায় শেষের দিকে থাকা সত্ত্বেও ২০১২ সালে তিনি সিনিয়রদের পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রদূত হন।
সুফিউর রহমান অক্টোবর ২০২২ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং জেনেভার জাতিসংঘ অফিসসমূহ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে জবাবদিহি নিশ্চিত করেন। তিনি মানবাধিকার কাউন্সিলে জাতিসংঘের জেনেভা অফিসে হাসিনা সরকারের নিপীড়নের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
এর আগে সুফিউর রহমান ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিজি এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে।
সূত্রে জানা গেছে, সুফিউর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোঝাতে সমর্থ হন যে বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে তিনি শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন। নানাভাবে সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে থাকেন।
সুফিউর রহমান ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত তৎকালীন সরকার তার অবসরোত্তর মেয়াদ বাড়িয়ে দেন।
এদিকে, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাবের খবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতিশীল ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে সুফিউর রহমান বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য উপযুক্ত পছন্দ নন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতিশীল ও আদর্শবান কর্মকর্তারা মনে করছেন বলে জানা গেছে।
এম.কে
০৭ অক্টোবর ২০২৪