5.9 C
London
December 26, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

সেনা অভিযুক্তদের ‘বিশেষ সুবিধা’?—সেনানিবাসের ভেতর সাবজেলে রাখায় প্রশ্ন;

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে বুধবার সেনা হেফাজতে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ জন কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের সাধারণ জেলে না পাঠিয়ে সেনানিবাসের ভেতর ‘সাবজেল’-এ রাখার নির্দেশে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আদালত একইসাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্য পলাতকদের হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও নির্দেশ দিয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, ট্রাইব্যুনাল কাস্টডির নির্দেশ দিয়েছে—অর্থাৎ এখন থেকে আসামিরা কারা কর্তৃপক্ষের অধীনে। কোথায় রাখা হবে, তা নির্ধারণ করবে সরকার ও কারা বিভাগ। তিনি বলেন,

“কারা কর্তৃপক্ষের অধীনে যাওয়ার পর কোথায় রাখা হবে—ঢাকায়, চট্টগ্রামে বা সাবজেলে—এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ সরকারের।”
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মো. তানভীর হোসেন বলেন, “তাদের সেনানিবাসের সাবজেলে নেওয়া হয়েছে, এবং তারা এখন কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।”

সরকার সম্প্রতি এক বিশেষ আদেশে সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাবজেল হিসেবে ঘোষণা করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভবনেই মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে রাখা হচ্ছে।
তবে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন—সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কারাবন্দিদের রাখা কি আইন ও প্রশাসনিক দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত?
একজন সাবেক কারা কর্মকর্তা বলেন, “সেনানিবাসের সাবজেলে ৩৫ জন কারারক্ষী দায়িত্বে আছেন। কিন্তু তারা কি সেনা পরিবেশে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন?”
এছাড়া অভিযোগ উঠেছে, সেনানিবাসে অবস্থান করে আসামিরা ইন্টারনেট বা যোগাযোগ সুবিধা ব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর সুযোগ পেতে পারেন।

বিচার বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাবজেলে রাখার সিদ্ধান্ত বিশেষ সুবিধা দেওয়ার শামিল। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—যেখানে সাধারণ আসামিরা নাজিমউদ্দিন রোড বা কাশিমপুরের মতো জেলে পাঠানো হয়, সেখানে সেনা কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত কেন?
একজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই মামলাগুলো গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগের। এমন আসামিদের জন্য সেনানিবাসের সাবজেল মানে হলো শৃঙ্খলার নামে সুবিধাজনক বন্দিত্ব।”

বুধবার সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই সবুজ ‘প্রিজন ভ্যান’-এ করে সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। সকাল সোয়া সাতটার দিকে তাদের একে একে গাড়ি থেকে নামানো হয়। সবাই ছিলেন সাদা পোশাকে, কারও মুখে ছিল মাস্ক।
ঢাকার কাকরাইল, পল্টন, বাংলামোটর, মৎস্য ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএনের সদস্যরা নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে।

আইনজীবী ব্যারিস্টার সারওয়ার হোসেন বলেন, “তারা আইনকে সম্মান করেই আত্মসমর্পণ করেছে। তারা নির্দোষ, এবং আদালতে সেটি প্রমাণিত হবে। প্রকৃত অপরাধীরা পালিয়ে গেছে।”
তবে প্রসিকিউশন সূত্রে জানা যায়, তাদের বিরুদ্ধে গুম, নির্যাতন ও হত্যা—এই তিন ধরনের অভিযোগই রয়েছে।

একই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান ও র‍্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদসহ কয়েকজন পলাতক আছেন। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তাদের হাজির করতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
এটি প্রথমবারের মতো কোনো গুম-নির্যাতনের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরের ঘটনা, যা বাংলাদেশে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।

এই মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের সাবজেলে রাখা সরকারের স্বচ্ছতা ও সমতার প্রশ্নে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের যদি সেনানিবাসের সুরক্ষিত পরিবেশে রাখা হয়, তবে তা বিচার প্রক্রিয়ার স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে—এমন মত দিয়েছেন আইনি মহলের অনেকে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

এম.কে

আরো পড়ুন

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের জয়কে অভিনন্দন জানালেন পাকিস্তান জামায়াতের আমির

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরীর পদত্যাগ

সিলেটের শ্রীমুখঃ এশিয়ার ক্ষুদ্রতম গ্রাম, বিশ্বের স্বীকৃতির অপেক্ষায়