TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

সৈন্যের জন্য মরিয়া ইউক্রেন, পাসপোর্ট জব্দ, মানসিক প্রতিবন্ধীকেও নিয়োগের চেষ্টা

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনের সেনাদের মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। যুদ্ধ এখন একপ্রকার অচলাবস্থায় আছে, রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে বলার মতো কোনো সাফল্যই পাচ্ছে না কিয়েভ। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকতে আরও সৈন্যের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ইউক্রেন।

কিয়েভ এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য রাস্তা থেকে পুরুষদের ধরে নিয়োগকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে; মানুষের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হুমকি দিয়ে বা জোর করেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করানোর জন্য। এমনকি এক মানসিক প্রতিবন্ধীকেও সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিতে চেষ্টা করেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের আইনজীবী ও অধিকারকর্মীরা।

ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানুষকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়োগকেন্দ্রে যাওয়া হচ্ছে, এমন অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।

অনেককেই সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য ড্রাফট নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়োগ কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট করতে হচ্ছে।

ইচ্ছার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়া ঠেকাতে অনেক ইউক্রেনীয়ই আদালতের আশ্রয় নিচ্ছেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, রাশিয়ার আক্রমণ, অর্থাৎ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকেই ইউক্রেনে সামরিক আইন জারি রয়েছে। এ কারণে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

বাধ্যতামূলকভাবে সৈন্য নিয়োগের মামলা নিয়ে কাজ করেন পশ্চিম ইউক্রেনের আইনজীবী তেতিয়ানা ফেফচাক। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী নিজেদের দায়মুক্ত মনে করছে।’ তার মতে, যুদ্ধের জন্য সেনা ভর্তি করানোর কিছু কৌশল ইউক্রেনের আইন ভঙ্গ করেছে।

সেনা নিয়োগের জন্য ইউক্রেনের আরও মরিয়া হয়ে উঠা প্রমাণ করে যে দেশটির সেনা-সম্পদ সীমিত এবং ২২ মাসের যুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে।

রাশিয়া আক্রমণ করার পরপরই বহু ইউক্রেনীয় স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন দেশটির সরকার স্বীকার করেছে যে বহু মানুষ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর চেষ্টা করছে।

রাশিয়া হামলা শুরুর পর কিয়েভ সরকার ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের দেশত্যাগ করতে দেয়নি। এরপর থেকেই দেশটির সরকার নিয়মিত সেনাভর্তি করছে।

কিয়েভের একজন আইনজীবী নিউইয়র্ক টাইমসকে মেসেজ পাঠিয়ে জানান, ‘আমার স্বামী রাতের শিফটে কাজ শেষ করে সকালে বাড়ি ফিরছিল। পথে তাকে রিক্রুটিং সেন্টারের টিম আটকায়। এরপর তাকে জোর করে মেডিকেল কমিশন করানো হয়।’

আরেকটি মেসেজে বলা হয়েছে: ‘পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে ক্যামোফ্লাজ ইউনিফর্ম পরা লোকজন প্রতিষ্ঠানে আসে, পুরুষদের ফোন কেড়ে নেয়, তারপর তাদের রিক্রুটিং অফিসে নিয়ে গিয়ে জোর করে কিছু একটাতে স্বাক্ষর করায়।’

আইনজীবী ফেফচাক জানান, এ ধরনের ঘটনা গত ছয় মাসে অনেক বেড়ে গেছে ইউক্রেনে। তিনি বলেন, যুদ্ধের শুরুতে স্বেচ্ছাসেবী সেনার অভাব হয়নি। কিন্তু গত কয়েক মাসে দিনে ৩০ থেকে ৪০টি করে ফোনকল করে তাকে জানানো হচ্ছে যে পুরুষদের জোর করে সেনাবাহিনীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অন্যান্য আইনজীবীরাও এ ধরনের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন।

এছাড়া ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে দুর্নীতিও বড় একটি সমস্যা। সেনাবাহিনীতে ভর্তি না করানোর বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে ঘুস নেন অনেক সামরিক কর্মকর্তা।

যুদ্ধের প্রথম দিকে ভিঝনিস্তিয়া রিক্রুটিং সেন্টারে কাজ করতেন আন্দ্রেই সেমাকা নামে একজন সৈন্য। তিনি জানান, তার অফিসে দিনে ১৫ থেকে ২০ জনের নাম আসত বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য। এদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ ব্যক্তি ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে ১ হাজার ডলারের মতো ঘুস দিয়ে সেনাবাহিনীতে ভর্তির তালিকা থেকে নিজের নাম কাটাতেন।

নিউইয়র্ক টাইমসকে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জোরপূর্বক সেনা ভর্তির বর্ণনা দেন ওই এলাকার ৫৮ বছর বয়সি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্যাক্সিচালক। তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো আইন নেই।’

যুদ্ধে রুশ বাহিনীর যেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তেমনি বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীরও। গত আগস্ট পর্যন্ত মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা অনুসারে, ৭০ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি। সেই সংখ্যা এতদিনে আরও বেড়েছে।

সূত্রঃ দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

এম.কে
১৮ ডিসেম্বর ২০২৩

 

আরো পড়ুন

গোটা দেশের বিদ্যুতের চাহিদা মিটবে এক নিমিষে, বিশ্বকে তাক লাগানো পরিকল্পনা

নিজ দেশে ফিরে গেলে অভিবাসীদের ৩৪ হাজার ডলার দেবে সুইডেন

মৃত্যুদণ্ড হতে পারে ইমরান খানের!