ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে নতুন অভিবাসন প্রত্যাবাসন চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। আলোচিত এই চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় অবৈধভাবে প্রবেশ করা প্রতি ৫০ জন শরণার্থীকে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ফ্রান্সে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বিনিময়ে ফ্রান্সে বৈধভাবে আশ্রয় পাওয়া কিছু ব্যক্তিকে ব্রিটেন গ্রহণ করবে।
এই চুক্তি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টার থেকে যৌথভাবে ঘোষণা করা হয়। চ্যানেল পাড়ি দেওয়া শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়ার পর তারা ফেরত পাঠানো হবে ফ্রান্সের উত্তরের উপকূল এড়িয়ে। ভবিষ্যতে যদি তারা আবার ব্রিটেনে প্রবেশ করে, সেক্ষেত্রে দ্রুত ফেরত পাঠানোর জন্য তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
এটি একধরনের পাইলট প্রকল্প, যার সময়সীমা এখনও নির্ধারিত নয়। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের নেতারা জানিয়েছেন, এটি “কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই” শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সম্মতি পাওয়া এখনও একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলো আশঙ্কা করছে, ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো শরণার্থীরা আবার দক্ষিণ ইউরোপে ফিরে যেতে পারে।
এই চুক্তিতে শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ ছোট নৌকায় পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করা শিশুদের আটক করা হয় না। শুধু প্রাপ্তবয়স্কদেরই বাছাই করে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, যেখানে অগ্রাধিকার পাবে যারা পাচারকারীদের ঝুঁকিতে রয়েছে বা যাদের ব্রিটেনে আত্মীয়স্বজন আছে।
যারা বৈধ পথে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে চায়, তাদের জন্য একটি অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। হোম অফিস জানিয়েছে, আবেদনকারীদের নিরাপত্তা যাচাইয়ের পর ব্রিটেনে প্রবেশ ও রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে।
ফ্রান্স অতিরিক্ত ড্রোন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ চাইলেও, ব্রিটেন এই চুক্তির আওতায় নতুন করে কোনো অর্থ প্রদান করবে না। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ অর্থ ব্যবহারের বিষয়ে সমালোচনার জবাবে বলেন, “আমরা স্থল ও রেলপথ বন্ধ করেছি, নৌকা যাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছি। পাচারকারীরা বদলাচ্ছে, আমাদেরও বদলাতে হবে।”
লেবার সরকার বলছে, এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে দুই দেশের নেতৃত্বের মধ্যে বিশ্বাস এবং ব্রিটেনের অবৈধ শ্রমবাজার দমনের প্রতিশ্রুতির কারণে। তারা মনে করে, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় ভিত্তি গড়ে দেবে।
এদিকে, বিরোধী নেতারা চুক্তিকে ‘মাইগ্রেশন সারেন্ডার ডিল’ আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেছেন। ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেন, “এই চুক্তি মানব পাচারকারীদের জন্য সবুজ সংকেত।” অথচ এই কৌশলের সূচনা যিনি করেছিলেন, সেই রবার্ট জেনরিক এবার ছিলেন অস্বাভাবিকভাবে নীরব।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১১ জুলাই ২০২৫