হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শিক্ষার্থী নিকোল মাও (৩৩) এবং ইওয়েই ঝু (৩২) গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশের অন্যতম সফল স্টার্টআপ প্রোগ্রাম তৈরি করছেন বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়। করোনা মহামারির সময় বাংলাদেশে আটকে পড়ার পর এই উদ্যোগ শুরু করেন এই দুই হার্ভার্ড শিক্ষার্থী।
ইওয়েই ঝু, টাইগার নিউ এনার্জির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সুযোগ পেলে এই তরুণ তার কোম্পানি দ্বারা বিশ্বের জনবহুল অঞ্চলের নগর পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চান।
নিকোল মাও এবং ইওয়েই ঝু, হার্ভার্ড স্নাতক, তিন বছর ধরে বাংলাদেশে একটি ব্যাটারি-সুইপিং নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন যা ইলেকট্রিক রিকশাগুলোর জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামী বছরে এই নেটওয়ার্ক ১,০০০ স্টেশনে পৌঁছাবে, যা মূলত বাংলাদেশের লক্ষাধিক তিন চাকার যানবাহনকে সেবা প্রদান করবে।
মাও এবং ঝুর কোম্পানি, টাইগার নিউ এনার্জি, রিকশাচালকদের জীবন সহজ করে দিচ্ছে। তারা যেকোনো সময় নতুন ব্যাটারিতে পরিবর্তনের সুযোগ পাচ্ছেন। এই সেবার জন্য চালকদের ফি দিতে হয়, তবে সময় সাশ্রয় হওয়ায় তারা বেশি ট্রিপ নিতে পারছেন এবং আয় বাড়াতে পারছেন।
ঢাকাভিত্তিক স্টার্টআপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাও বলেন, “ তৃতীয় বিশ্বের দেশে বিশাল চাহিদা রয়েছে। অর্থনীতির উন্নতির সাথে সাথে গ্রাম থেকে শহরে কাজের সন্ধানে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এর ফলে চলাচলের চাহিদা তৈরি হচ্ছে।”
ভারত ও থাইল্যান্ডের টুকটুক পরিবহন সাধারণত পেট্রোল বা প্রাকৃতিক গ্যাসে চলে, তবে ঢাকাসহ বাংলাদেশের শহরগুলোতে চলা তিন চাকার যানবাহন প্রধানত বিদ্যুৎচালিত। তবে এসব যানবাহনের চার্জিংয়ে সময় বেশি লাগে এবং রিক্সায় ব্যবহৃত লিড-অ্যাসিড ব্যাটারি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
মাও এবং ঝু সম্ভাবনা দেখলেও তাদের পক্ষে কোম্পানিটি এখনও পুরোদস্তুর শুরু করা সম্ভব হয়নি।
২০২১ সালে শিক্ষার্থীদের বসন্ত বিরতির সময় চীনা এই জুটি বাংলাদেশে মাত্র এক সপ্তাহ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ওই সময় হঠাৎ কোভিড-১৯ এর ঢেউয়ের কারণে তাদের চীনগামী ফ্লাইট বাতিল হয় এবং তারা কয়েক মাস ধরে ঢাকার একটি হোম-স্টে’তে আটকে পড়েন।
তারা রাতের বেলা জুম কলের মাধ্যমে তাদের শেষ হার্ভার্ড ক্লাস শেষ করতেন এবং দিনের বেলা তাদের স্টার্টআপ আইডিয়া নিয়ে কাজ করতেন।
মাও-এর পরিবারের চীনে একটি ব্যাটারি তৈরির কোম্পানি থাকায় তারা বাংলাদেশেও একই ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেন। তারা চীনের উপকরণ দিয়ে আরও টেকসই লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেন।
কোম্পানির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ঝু বলেন, “এটি ছিল একপ্রকার পাগলামি। স্থানীয় কর্মী নিয়োগ, ফ্যাক্টরির জন্য জমি খুঁজে বের করা এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ আমাদের একা করতে হয়েছিল।”
তবে তারা শিগগিরই বুঝতে পারেন যে অনেক রিকশাচালক একবারে ৪০০ ডলার দিয়ে তাদের পণ্য কিনতে রাজি নন বা সক্ষম নন, যদিও সেগুলো লিড-অ্যাসিড ব্যাটারির তুলনায় বেশি মাইলেজ এবং দীর্ঘস্থায়ী ছিল। তাই তারা ব্যাটারি সোয়াপিং সিস্টেম চালু করেন—এবং সেটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
চালকরা তাদের ব্যাটারির স্থায়ীত্ব কমে গেলে স্বয়ংক্রিয় সোয়াপ স্টেশনে গিয়ে নতুন ব্যাটারি সংগ্রহ করেন। তাছাড়া তারা ভয়েস ইনস্ট্রাকশন প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করে তোলেন। স্টেশনগুলো স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের সাথে যুক্ত এবং কিছু স্টেশনে সোলার প্যানেল রয়েছে যা চার্জিংয়ে সহায়তা করে এবং বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব হ্রাস করে।
এই দুই উদ্যোক্তা ফিলিপাইনের এডিবি ভেঞ্চারস এবং সিঙ্গাপুরের ওয়েভমেকার পার্টনার্স থেকে তহবিল সংগ্রহ করেন। এর মাধ্যমে তারা একটি লিথিয়াম ব্যাটারি ফ্যাক্টরি তৈরি করেন এবং বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চট্টগ্রামে প্রথম ১০০টি সোয়াপিং স্টেশন চালু করেন।
কোম্পানিটি এখন ৩০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সিরিজ তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন, যা দিয়ে তারা ২০২৫ সালের পর স্টেশনের সংখ্যা ২,০০০-এ উন্নীত করতে চান। এছাড়া তারা আগামী বছর নেপাল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পরিকল্পনা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন, যেখানে ই-রিকশা এবং ই-বাইকের জনপ্রিয়তা রয়েছে।
স্টার্টআপটির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ। গত গ্রীষ্মে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপসারণের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং ন্যায্য বাজার নীতির উপর মনোযোগ দিচ্ছে।
“এই পরিবর্তনের মধ্যে, বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সমৃদ্ধ হবে বলে একটি ক্রমবর্ধমান বিশ্বাস রয়েছে,” নভেম্বর মাসে প্রকাশিত লাইটক্যাসেল পার্টনার্সের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে স্থানীয় স্টার্টআপগুলো প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে।
সূত্রঃ ব্লুমবার্গ
এম.কে
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪