যুক্তরাজ্যে একজন মহিলা ডিপোর্টের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। যদি মালওয়াত্টেজ পিয়েরিস নামের মহিলাকে ডিপোর্ট করা হয় তাহলে তিনি স্বামী এবং দশ বছরের ছেলের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যেতে হবে বলে জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। কিন্তু আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছে মালওয়াত্টেজ পিয়েরিসের তার পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার রয়েছে।
হোম অফিস আদালতের এই সিদ্ধান্ত জানার পরও মালওয়াত্টেজ পিয়েরিসকে যুক্তরাজ্য ত্যাগের জন্য চিঠি ইস্যু করেছে। হোম অফিসের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করছে একটি গ্রুপ। ক্যাম্পেইন গ্রুপ আদালতের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করাকে হোম অফিসের জন্য লজ্জাজনক বলে মত দিয়েছে।
পিয়েরিসের স্বামী, সুমিথ কোডাগোদা রানাসিংহেজ একজন ইতালীয় নাগরিক। সুমিথের ২০২০ সালে ইইউ বন্দোবস্ত প্রকল্পের (ইইউএস) এর অধীনে প্রাক-নিষ্পত্তি মর্যাদা মঞ্জুর করা হয়েছিল। পিয়েরিস যিনি ইতালিয়ান বাসিন্দা এবং তার ছেলে কেভিন একজন ইতালিয়ান নাগরিক, উভয়েই সুমিথের সাথে ইউকেতে যোগদানের জন্য আবেদন করেছিলেন ইওএসএস ফ্যামিলি পারমিট স্কিমে। কিন্তু কোভিড মহামারীর জন্য আবেদনটি বিলম্বিত হয়েছিল এবং এই কারণ দেখিয়ে ২০২২ সালের এপ্রিলে হোম অফিস আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে।
পরবর্তীতে পরিবারটি ইমিগ্রেশনের উচ্চ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে হোম অফিসের রায়ের বিরুদ্ধে। বিচারক ২০২২ সালের জুলাই মাসে রায় দেন, পরিবারটি সঠিক এবং যুক্তরাজ্যে একসাথে থাকার অধিকার তাদের রয়েছে।
যার ফলে হোম অফিস ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে মা ও পুত্রকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের অধিকার মঞ্জুর করে। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রেরিত একটি ই-মেইলের মাধ্যমে ইওএসএস ফ্যামিলি পারমিটের বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরের মাসে কেভিন হোম অফিসের কাছ থেকে আরও একটি নিশ্চিতকরণমূলক চিঠি পায়। কিন্তু কেভিনের বয়স মাত্র ১০ বছর হওয়া সত্ত্বেও হোম অফিস তাকে জানিয়েছিল যে তার কাজ করার এবং তার পেনশন সহ সকল সুবিধা অ্যাক্সেস করার অধিকার রয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে, পিয়েরিস হোম অফিসের কাছ থেকে আরও একটি চিঠি পান। যদিও আদালত ইতোমধ্যে তাকে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দিয়েছিল তা সত্ত্বেও তার মামলাটি “বিবেচনাধীন” রয়েছে বলা হয় চিঠিতে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরও একটি চিঠি পাঠায় হোম অফিস। যে চিঠিতে তাকে জানানো হয় যে তিনি ইইউএসের প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে পারেননি।
এছাড়া চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, তিনি যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি চেয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে আপিল আবেদন করতে পারবেন। যদিও ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনালে তার আবেদন গ্রাহ্য করা হয়েছিল। হোম অফিস চিঠিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে তিনি যদি অনুমতি ছাড়াই যুক্তরাজ্যে থাকেন তবে তাকে আটক করা হতে পারে এবং তার জরিমানা হতে পারে। এইভাবে তাকে গ্রেফতার করে অপসারণ করলে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন।
পিয়েরিস বলেন, “ আমি হোম অফিসের সিদ্ধান্তে নির্বাক হয়ে গিয়েছি। আমি আমার স্বামী, সন্তানকে ফেলে কিভাবে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করবো। আমার পরিবার ছাড়া আমার কোনো ভবিষ্যত নেই। আমার ছেলে এবং স্বামী আমার পৃথিবী।
ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে হোম অফিসের ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এমটিসি সলিসিটারের নাগা কান্দিয়াহ বলেন, “ হোম অফিস নিজেই আইনকে তোয়াক্কা না করার এবং ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে বুড়ি আঙ্গুল দেখানোর এটা একটি সর্বোত্তম উদাহরণ। হোম অফিসের অক্ষমতার কারণে এখন একটি পরিবার ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ”
যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের অধিকার রক্ষা প্রচারণা চালানো সংস্থা থ্রি মিলিয়ন সংস্থার আন্দ্রেয়া ডুমিত্রাচ হোম অফিসের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। হোম অফিসের এইসব অসংলগ্ন আচরণ দেখে আমরা স্তম্ভিত বলেন তিনি।
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, “ সমস্ত ভিসা অ্যাপ্লিকেশনগুলি তাদের যোগ্যতার উপর সাবধানতার সাথে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া কোনো নির্দিষ্ট মামলা নিয়ে আমরা পৃথকভাবে মন্তব্য করি না। ”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪