যুক্তরাজ্যের ওল্ডহ্যামে এক ভয়াবহ ঘটনায়, মাত্র ১৪ বছর বয়সে ‘গ্রুমিং গ্যাং’-এর (Grooming Gang – প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা চক্র) শিকার হওয়া এক মেয়ে পুলিশের চোখের সামনে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরও উল্টো নিজেই গ্রেফতার হয়েছেন।
পুলিশের ভূমিকা এবং কেয়ারহোমের চরম অবহেলায় ক্ষোভে ফুঁসছে নির্যাতিতা মেয়েটি। তার মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা সমাজের গালে চপেটাঘাত করে প্রশ্ন তুলেছে, কারা আসলে অপরাধী?
কীভাবে শুরু হয়েছিল নির্মমতা?
১২ বছর বয়স থেকেই মেয়েটিকে গ্রুমিং গ্যাংয়ের ফাঁদে ফেলা হয়। একদিন স্কুলে ১৫ বছর বয়সী এক মেয়ের মাধ্যমে তার পরিচয় হয় এক মধ্যবয়সী এশিয়ান পুরুষের সঙ্গে। প্রথমে সেই ব্যক্তি তাকে সিগারেট কিনে দিত এবং টাকা দিত। ধীরে ধীরে সে এতটাই সাহসী হয়ে ওঠে যে, মেয়েটির মায়ের ফোনেও কল করা শুরু করে।
মেয়েটির মা সেই ব্যক্তিকে ফোন করে সতর্ক করেছিলেন: “তুমি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ, আমার মেয়ের ফোনে কল করছ কেন? তার বয়স তুমি জানো!” মায়ের এই সতর্কতার পরই সেই ব্যক্তি মেয়েটিকে গোপনে একটি মোবাইল ফোন কিনে দেয় এবং মায়ের থেকে লুকিয়ে রাখতে বলে। নিজেকে স্থানীয় টিভি রিপোর্টার বলে পরিচয় দিলেও, তা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ধর্ষণের বিভীষিকাময় শুরুঃ
একদিন সেই ব্যক্তি মেয়েটিকে প্রচুর মদ পান করিয়ে তার গাড়িতে ধর্ষণ করে। এরপর পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তাকে এক বাড়িতে গিয়ে একজনের চাচার সাথে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়, কারণ তারা বলেছিল এতে সেই লোকের জন্মদিন ভালো কাটবে!
পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকাঃ
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যখন পুলিশ সরাসরি একজন অবৈধ অভিবাসীকে মেয়েটিকে ধর্ষণ করতে দেখেও তাকে না ধরে উল্টো মেয়েটিকে গ্রেফতার করে। মেয়েটির প্যান্ট নামানো অবস্থায়, ধর্ষক তার উপর চেপে বসে থাকা সত্ত্বেও পুলিশ বলে যে মেয়েটি পতিতাবৃত্তি করছে!
কেয়ার হোমের ভয়াবহ অভিজ্ঞতাঃ
গ্রেফতারের পর মেয়েটিকে কেয়ার হোমে পাঠানো হয়। সেখানে তার অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। কেয়ার হোমের কর্মীরাই মেয়েটিকে ধর্ষকদের সাথে দেখা করতে সাহায্য করত! কখনো ম্যাকডোনাল্ডস কিনে দিত যাতে মেয়েটি কাউকে কিছু না বলে। এমনকি কেয়ারহোমের একজন কর্মী তার ভাইপোকেও নিয়ে এসে মেয়েদের গাঁজা খাওয়াত!
জীবনের পথে দীর্ঘ ছায়াঃ
এই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কারণে মেয়েটি মনে করে ৫০ জনেরও বেশি পুরুষ তাকে শতাধিকবার ধর্ষণ করেছে। বর্তমানে সে জটিল পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (PTSD) ভুগছে এবং প্রায়ই বাইরে যেতে পারে না। তবে সে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কারণ আজও অনেক মেয়ে একই পরিস্থিতিতে রয়েছে।
দায় কার?
মেয়েটির মতে, পুলিশ, সোশ্যাল সার্ভিস এবং কাউন্সিল – সবাই ব্যর্থ হয়েছে। তারা তাকে “উচ্ছৃঙ্খল কিশোরী” বলে চিহ্নিত করেছিল, কিন্তু আসল অপরাধীরা আজও মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
নির্যাতিতার আকুল আবেদনঃ
নির্যাতিতা মেয়েটি চায় প্রতিটি ধর্ষণ থেকে বেঁচে ফেরা মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা হোক। সে বিশ্বাস করে, তাদের লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, লজ্জা পাওয়া উচিত সেই সমাজের, যে তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে!
সূত্রঃ দ্য সান
এম.কে
১৭ জুলাই ২০২৫