TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

২০২৫ সালে স্পেনে পৌঁছাতে গিয়ে প্রাণ হারালেন ৩ হাজারের বেশি অভিবাসী

২০২৫ সালে সমুদ্রপথে স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে গিয়ে অন্তত ৩,০৯০ জন অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম হলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ অভিবাসীদের আরও ঝুঁকিপূর্ণ ও দীর্ঘ রুটে ঠেলে দিচ্ছে, যার ফলে মানবিক বিপর্যয় অব্যাহত রয়েছে।
এনজিও কামিনান্দো ফ্রন্তেরাস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১৯২ জন নারী ও ৪৩৭ জন শিশু রয়েছে। যদিও এই সংখ্যা ২০২৪ সালের ১০,৪৫৭ মৃত্যুর তুলনায় কম, তবুও পরিস্থিতিকে স্বস্তিদায়ক বলার সুযোগ নেই বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।

 

সংস্থাটির গবেষণা সমন্বয়ক হেলেনা মালেনো জানান, চলতি বছরে ৩০৩টি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে এবং অন্তত ৭০টি নৌকা নিখোঁজ হয়ে গেছে। তার মতে, আলজেরিয়া থেকে বালেয়ারিক দ্বীপপুঞ্জের দিকে যাত্রার হার বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নৌকায় যাত্রীসংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও সমুদ্রপথ অত্যন্ত বিপজ্জনক।

স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমুদ্র ও স্থলপথে মোট ৩৫,৯৩৫ জন অনিয়মিত অভিবাসী দেশটিতে প্রবেশ করেছেন, যেখানে ২০২৪ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৬০,৩১১ জন। এই বড় ধরনের হ্রাসের পেছনে সীমান্ত নজরদারি জোরদার করাকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশেষ করে মরিতানিয়া হয়ে যাত্রা কমে যাওয়ায় স্পেনগামী অভিবাসনের চাপ হ্রাস পেয়েছে। ২০২৪ সালে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি অভিবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার আওতায় ২১০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা পায়। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, এই সহযোগিতার ফলে অভিবাসীদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা বেড়েছে—যা মরিতানিয়া সরকার অস্বীকার করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর আফ্রিকা থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জগামী আটলান্টিক রুটটি এখনো সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ২০২৫ সালে এই পথে প্রাণ হারিয়েছেন ১,৯০৬ জন। পাশাপাশি আলজেরিয়া–বালেয়ারিক রুটে মৃত্যু হয়েছে ১,০৩৭ জনের। এছাড়া গিনি থেকে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নতুন রুট ব্যবহারের প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।

হেলেনা মালেনো এই পরিস্থিতিকে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতির প্রভাবে গড়ে ওঠা এক ধরনের “নেক্রোপলিটিক্স” বা মৃত্যুভিত্তিক নীতির ফল বলে আখ্যা দেন। তার ভাষায়, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও ভয়ভীতি ইউরোপজুড়ে মানবাধিকারের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, সমুদ্রে দুর্ঘটনার পর উদ্ধার ও সহায়তায় রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়া এখনও অপর্যাপ্ত। উদ্ধার অভিযানে বিলম্ব, পর্যাপ্ত সম্পদের ঘাটতি এবং জীবন রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।

নিহত অভিবাসীরা ৩০টি দেশের নাগরিক। তাদের বেশিরভাগই পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকার হলেও, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, সুদান, ইরাক ও মিসর থেকেও অনেকে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থার ৫.৭ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান অবৈধ ইসরায়েলি বসতিতে

জার্মানির নতুন ‘চীন নীতি’

বাধ্যতামূলক যৌনশিক্ষার বিপক্ষে ইতালি