২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। তারপর থেকে দেশজুড়ে অস্থিরতা ও রাজনৈতিক পরিবর্তন চলছে। ভারতে অবস্থানকালে তিনি বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করছেন কিন্তু তার বিরুদ্ধে হত্যা ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে তবে তার দেশে ফেরার বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছে। ভারতীয় কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেছেন যে হাসিনাকে নিয়ে তারা “না পারছে গিলতে, না পারছে ওগরাতে”। ভারত বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে তৎপর। তবে জামায়াত বা হেফাজতে ইসলামের মতো ইসলামী শক্তির উত্থান ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে গেছে সম্প্রতি। একসময় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা শেখ হাসিনা এখন ভারতের দিল্লিতে লোকচক্ষুর আড়ালে। দেশের পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং জনগণের রায় – সব মিলিয়ে বদলে গেছে চিত্রপট। একসময় গণভবনের আয়নাঘরে রাজত্ব করা হাসিনা এখন একাধিক হত্যা মামলার আসামি, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ অনুসন্ধানে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
সরকারি দপ্তর থেকে সংসদ পর্যন্ত যার ছিল একচ্ছত্র দখল সেই হাসিনা আজ এক পলাতক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে তাকে। ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মোদি সরকারের ছায়াতলে। তবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে তার দেশে ফেরা আর সম্ভাবনার পর্যায়ে নেই।
হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে একধরনের টানাপোড়েন দেখা দেয়। ভারত সরকার ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করে, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও স্থগিত করে দেয়। বলা হচ্ছে মোদি সরকার প্রতিশোধমূলক কৌশল নিচ্ছে বাংলাদেশকে আবার নিয়ন্ত্রণে আনতে। তবে এসব চাপ ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দমাতে পারেনি।
ডক্টর ইউনুসের কৌশলী নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত। তিনি চীনের সঙ্গে তিস্তা মহাপরিকল্পনায় চুক্তি সম্পন্ন করেছেন মংলা বন্দরে চীনকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং ভারতের ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে বিকল্প চিকিৎসা ও যোগাযোগের পথ তৈরি করেছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইলন মাস্কের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে ডক্টর ইউনুস একটি কূটনৈতিক বাজিমাত করেছেন। এটা আওয়ামী লীগের জন্য এক বিশাল ধাক্কা। আওয়ামীলীগ ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সমর্থন আশা করলেও বাস্তবতা হয়েছে ভিন্ন।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় রয়েছেন ক্ষমতা হারানো হাসিনা। সেখানে কখনো তার ক্ষোভ, কখনো তার দিবা স্বপ্নের প্রকাশ দেখা যায়। মাঝে মাঝে “আপা আপা” ডাক শুনে তিনি ফিরে যান কল্পনার রাজ্যে যেখানে তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তবে বাস্তবতা হলো সেই অধ্যায় এখন ইতিহাস। বর্তমান বাংলাদেশ এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে যেখানে একসময়কার ‘মহারানী’ শেখ হাসিনার ফিরতে চাওয়া আর নিছক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়।
এম.কে
১৪ এপ্রিল ২০২৫