TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

অতিরিক্ত জোরে শিশুকে নাড়াচাড়া করায় হৃদপিন্ড বন্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যুঃ বাঙ্গালী পিতার বিচার শুরু

লন্ডনের বেক্সলি হিথে এক নয় সপ্তাহ বয়সী শিশুপুত্রকে মারাত্মকভাবে ঝাঁকুনি দিয়ে হত্যার অভিযোগে তার বাবার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১০ জুন শিশুটি মারাত্মক মাথা ও শরীরের আঘাত পায়, যার ফলে তার হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। চার মাস জীবনযুদ্ধের পর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে তার মৃত্যু হয়।

আদালতে অভিযোগপক্ষ জানায়,আদিয়াত হোসেন নামের শিশুটি শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল, যা কেবলমাত্র “সহিংস ঝাঁকুনি” থেকেই সম্ভব। তদন্তে জানা গেছে, মৃত্যুর আগের সপ্তাহগুলোতেও আদিয়াতের শরীরে একাধিক পুরনো আঘাতের চিহ্ন ছিল — ছয়টি পাঁজরের হাড় ভাঙা, দুই কাঁধে ফ্র‍্যাকচার বা চিঁড় ফাটল।

ইনার লন্ডন ক্রাউন কোর্টে বিচারাধীন এই মামলায় ৪৭ বছর বয়সী বাবা, মোহাম্মদ কবির হোসেন, অবৈধভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। প্রসিকিউটর জেমস ডজেস কেসি (James Dawes KC) জুরিদের বলেন, “মেডিকেল প্রমাণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত স্পষ্ট — শিশুটিকে সহিংসভাবে নাড়ানো হয়েছিল। শিশুটির পিতা মি. হোসেন এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”

শিশুর মা ফাতেমা মনসুর আদালতে জানান, সেদিন সকালে আদিয়াত সুস্থ ছিল। দুপুর ১২টা ০৪ মিনিটে তিনি বাজারে বের হন, এবং মাত্র ১৩ মিনিট পর দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে স্বামীর আতঙ্কিত ফোন পান। এরপর ১২টা ২৩ মিনিটে হোসেন ৯৯৯-এ ফোন দেন, বলেন, “সে ঠিকই ছিল। আমি শুধু টয়লেটে গিয়েছিলাম, ফিরে এসে দেখি সে শ্বাস নিচ্ছে না।”

অভিযোগপক্ষ জানায়, হোসেনের এই বক্তব্য সত্য নয়। সেই ১৩ মিনিটের মধ্যেই শিশুটিকে এমনভাবে নাড়ানো হয়েছিল যে তার চোখের ভিতর ও মস্তিষ্কের ঝিল্লিতে রক্তক্ষরণ হয়, শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, এবং হৃদপিণ্ড থেমে যায়। আদালতে শিশুর আগের সপ্তাহগুলোর তিনটি ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে হোসেনকে “রূঢ়ভাবে শিশুকে ধরতে” দেখা যায়।

তদন্তে উঠে এসেছে, আদিয়াত মৃত্যুর আগে অন্তত দুইবার গুরুতর শারীরিক আঘাত পেয়েছিল।

হোসেনকে ২০২২ সালের ১২ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একটি লিখিত বিবৃতি দেন এবং পরে আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। বিবৃতিতে তিনি বলেন,
“আমার প্রিয় সন্তান আদিয়াতের অবস্থায় আমি মর্মাহত। আমি কখনও তাকে আঘাত করিনি। সে আমাদের ভালোবাসায় বড় হওয়া সন্তান। আমি জানি না, কীভাবে সে এই আঘাত পেয়েছে।”

অভিযোগপক্ষের বিশেষজ্ঞরা একমত যে এই আঘাতগুলো কোনো দুর্ঘটনা, রোগ বা জেনেটিক সমস্যার কারণে হয়নি, বরং “অন্যের দ্বারা inflicted”।

ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট ড. নাথানিয়েল ক্যারি মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন —
১(ক) হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার জটিলতা এবং
১(খ) মাথায় আঘাত, যা “অ-দুর্ঘটনাজনিত আঘাত”-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইনার লন্ডন ক্রাউন কোর্টে মামলার বিচার ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এবং এটি ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সূত্রঃ ইয়াহু ডট নিউজ

এম.কে

আরো পড়ুন

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ব্রিটেনের রানির অভিনন্দন

শিশুদের জন্য ‘অ্যাপ কারফিউ’ ভাবছে যুক্তরাজ্য সরকার

ভারতে পা দিয়েই যা বললেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী