3.5 C
London
November 22, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত দুইমাস পর: যুক্তরাজ্য

আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে না রেখে আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় স্থানান্তরের বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে কি যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে অন্তত মাস দুয়েক সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের শীর্ষ আদালত৷ টানা তিন দিনের শুনানি শেষে বুধবার এ কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷

যুক্তরাজ্য থেকে চার হাজার মাইল দূরের দেশ রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তরের সপক্ষে চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত যুক্তি তুলে ধরেছেন সরকারপন্থি আইনজীবীরা৷

গত জুনে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে যুক্তরাজ্য সরকারের নেয়া পরিকল্পনাকে আইন বর্হিভূত উল্লেখ করে রায় দিয়েছে দেশটির আপিল আদালত৷ রুয়ান্ডা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ‘তৃতীয় নিরাপদ দেশ’ নয় বলেও জানিয়েছে আদালত৷ সেই রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ঋষি সুনাকের সরকার৷ তাই দেশটির শীর্ষ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন তারা৷

ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুনাক প্রশাসন৷ কারণ, ইংলিশ চ্যানেলে ‘ছোটো নৌকা’ বন্ধ করা দেশটির প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ পাঁচ অগ্রাধিকারের একটি৷ ফলে রুয়ান্ডা প্রকল্পের ভাগ্য এখন নির্ভর করছে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারকের সিদ্ধান্তের ওপর৷

শুনানি শেষ আদালত প্রেসিডেন্ট রবার্ট রিড বলেন, ‘‘রায় দিতে আমাদের কতদিন সময় লাগবে তা জানতে সবাই অধীর হয়ে অপেক্ষা করছেন৷ কিন্তু আমি সন্দিহান, কারণ নির্দিষ্ট করে সময় বলাটা কঠিন৷’’

নিম্ন আদালতগুলো এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে অন্তত দুই মাস সময় নিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি৷ তাদেরও তেমন সময় লাগতে পারে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে তার কথায়৷ সেই হিসেবে আশা করা যায়, এ বছরের মধ্য ডিসেম্বরে রায় জানাতে পারে সুপ্রিম কোর্ট৷

শুনানিতে অংশ নিয়ে, রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তর কতোটা জরুরি ও প্রয়োজনীয় তার ওপর জোর দিয়েছেন সরকারের আইনজীবীরা৷

বিপরীতে, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, ভিয়েতনাম এবং সুদান থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরাও প্রকল্পটির বিরোধিতা করে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেছেন৷ তারা আদালতে বলেন, রুয়ান্ডায় আশ্রয়প্রার্থীদের পাঠানো বেআইনি৷ কারণ, এর ফলে মানবাধিকার ইস্যুতে ইউরোপীয় কনভেনশন লঙ্ঘন করা হয়৷

আটজন আশ্রয়প্রার্থীর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী রাজা হোসেন বলেন, আশ্রয় চাওয়ার অধিকার থাকার পরেও যাদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে, সেসব আশ্রয়প্রার্থীদের আবারও নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে৷

তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রকল্পটির বিরোধিতা করে আরো বলেন, আশ্রয়প্রার্থীরা রুয়ান্ডায় অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণের মুখোমুখি হয়েছেন৷

যুক্তরাজ্যের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর৷

এদিকে, রুয়ান্ডা সরকার জানিয়েছে, ব্রিটেন থেকে পাঠানো অভিবাসীদের নতুন, নিরাপদ জীবন গড়ার সুযোগ দিতে পূর্ণ সহযোগিতা দেবে তারা৷ আর তাই, ব্রিটিশ সরকারও বলছে, রুয়ান্ডা থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে মানে সেখানে অভিবাসীরা ভালো থাকবেন৷

বছর খানেক আগে আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে না রেখে ‘তৃতীয় নিরাপদ দেশে’ স্থানান্তরে রুয়ান্ডার সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাজ্য৷ এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাইতে আসা ব্যক্তিদের রুয়ান্ডায় পাঠিয়ে তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করতে চেয়েছিল ব্রিটিশ সরকার৷ সরকারের যুক্তি ছিল, এর মধ্য দিয়ে মানব পাচারকারীদের তৎপরতা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে৷

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, চার হাজার মাইল দূরে রুয়ান্ডার মতো একটি দেশে অভিবাসীদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনৈতিক এবং অমানবিক৷ সরকার বিরোধীদের ওপর নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগসহ রুয়ান্ডার দুর্বল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও সোচ্চার অধিকার সংস্থাগুলো৷

ব্রিটেন ইতিমধ্যে চুক্তি বাস্তবায়নে রুয়ান্ডাকে ১৪ কোটি পাউন্ড অর্থ দিয়েছে৷ তবে, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেখানে একজন অভিবাসীকেও পাঠাতে পারেনি তারা৷ এর আগে, গত ডিসেম্বরে ব্রিটেনের হাইকোর্ট এক রায়ে জানিয়েছে, সরকারের অভিবাসী স্থানান্তর নীতিটি আইনি এবং জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তি বিরোধী নয়৷

কিন্তু ইরাক, ইরান এবং সিরিয়া থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যাদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে সরকার উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাদের অনেকে আবারো হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন৷ তারা দাবি করেন, সরকারের এই পরিকল্পনাটি ‘পদ্ধতিগতভাবে অন্যায্য’ এবং আশ্রয়প্রার্থীরা সেখানে নিরাপদ নন৷

এই ইস্যুতে এখন পর্যন্ত আদালতের দেয়া তিনটি রায়ের মধ্যে দুটি রায়ে বলা হয়েছে, রুয়ান্ডা আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়৷ কারণ দেশটির আশ্রয়ব্যবস্থার মধ্যে ‘গুরুতর ঘাটতি’ রয়েছে৷ আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রেও আদালত জানিয়েছে, সেখানে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন৷

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যদি শেষপর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকার আইনি লড়াইয়ে জিতেও যায়, রুয়ান্ডাতে কত জন আশ্রয়প্রার্থীকে পাঠানো হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ কারণ, সরকারের দেয়া তথ্য বলছে, অভিবাসী স্থানান্তর খুবই ব্যয়বহুল৷ জনপ্রতি খরচ হবে এক লাখ ৬৯ হাজার পাউন্ড৷

এম.কে
১২ অক্টোবর ২০২৩

আরো পড়ুন

প্রায় ৭ হাজার বেনিফিট অ্যাকাউন্ট বন্ধের ঝুঁকিতে

অনলাইন ডেস্ক

আইসল্যান্ড সুপারমার্কেটে বয়স্কদের জন্য ডিসকাউন্ট

অনলাইন ডেস্ক

আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য নিউ ইয়র্কের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াতে পারে দুই বিলিয়ন ডলার