বিশ্বমন্দা ছাড়াও শ্রমিক আন্দোলনসহ নানামুখী অপপ্রচারের শিকার হয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। নভেম্বর মাস শেষ হতে চললেও আসন্ন ফল মৌসুমে বিদেশি তেমন অর্ডার পায়নি বাংলাদেশ। ফলে এসব অর্ডার ভিয়েতনাম কিংবা কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর হাতে চলে যাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে বর্তমানে স্প্রিং-সামার মৌসুমের পণ্য উৎপাদন চলছে। আগামী মার্চ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এ মৌসুমের পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি চলবে বায়ারদের কাছে পণ্য পাঠানো। কিন্তু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে ফল মৌসুমের অর্ডার নিয়ে। চলতি নভেম্বর মাস থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মৌসুমের অর্ডার আসার কথা থাকলেও বিদেশি বায়ারদের কাছ থেকে তেমন সাড়া মিলছে না জানালেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
আশানুরূপ অর্ডার না পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বায়াররা প্রতি সপ্তাহেই আমাদের বলছেন যে, তারা বুকিং কনফার্ম করবেন। কিন্তু নভেম্বর মাস শেষ হয়ে আসলো, এখন পর্যন্ত আমরা তেমন একটা পণ্যের অর্ডার পাচ্ছি না। বর্তমানে আমরা বেতনের অংশ যদি কভার দিতে পারি, সেটি করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা সেটি তো পারছিই না, পাশাপাশি আমরা অর্ডারগুলোও পাচ্ছি না।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা হলো বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের মূল বাজার। আর এসব দেশেই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে অপপ্রচারের মাত্রা তুলনামূলক বেশি। তাই বায়ারদের আস্থা ফেরাতে দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাসকে এখনই ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
এ অবস্থায় বায়ারদের আস্থা ফেরাতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, ‘এখন বায়ারদের বুঝানোর সময় এসেছে যে, বাংলাদেশে তারা যদি পণ্য উৎপাদনের অর্ডার দেন, তাহলে তারা নিরাপদে পণ্য দিতে পারবেন এবং নিরাপদে বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে আবার এখান থেকে সময়মতো পণ্যের সরবরাহ নিতে পারবেন।’
চলতি অর্থ বছরের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি আয় হয়েছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
সবশেষ বেতন কাঠামো অনুসারে, ৫৬ শতাংশ হারে দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। এ খরচ মেটানোর জন্য বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকরা আবেদন জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল বায়ার প্রতিষ্ঠানের কাছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বায়ারদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। তারপরও আগামী মাসে কার্যকর হবে নতুন এ বেতন কাঠামো। আর এ নিয়েই সংশয়ের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প।
এম.কে
২৯ নভেম্বর ২০২৩