যুক্তরাজ্যের হোয়াইটহল-ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্ট (IfG) বলছে, কাজের ভিসা নিয়ে দশকের পর দশক ধরে চলে আসা “অসামঞ্জস্যপূর্ণ, বিচ্ছিন্ন ও পূর্বানুমানহীন” নীতির অবসান ঘটাতে সরকারকে বার্ষিক অভিবাসন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত।
হোয়াইট পেপার প্রকাশের প্রাক্কালে, ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্ট মন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ‘প্রতিক্রিয়াশীল, হঠকারী’ সিদ্ধান্ত পরিহারের।
সংস্থাটি জানায়, একাধিক সরকার এমন অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছে যা মূলত প্রতিক্রিয়াশীল এবং হঠকারী ছিল। যার জন্য রাজনীতিবিদরা নেট মাইগ্রেশন সংখ্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিবাসন পরিকল্পনার প্রকাশ করতে পারেন। এটি ব্যয়ের পরিকল্পনার মতো, যা সরকারিভাবে প্রকাশিত নথি হিসেবে প্রকাশ পাবে, সংসদে বিতর্ক হবে এবং সংসদীয় কমিটির পর্যালোচনার আওতায় আসবে।
এই প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন সরকার একটি নতুন অভিবাসন সংক্রান্ত হোয়াইট পেপার প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ব্যবসা, এনএইচএস, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সামাজিক সেবাখাত থেকে আরও ভিসার দাবি এবং মোট অভিবাসনের সংখ্যা কমানোর চাপের মুখোমুখি সরকার।
সপ্তাহের শুরুতে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট পেপারটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে বিলম্বিত হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাধারণত অভিবাসন সীমিত করার দিকেই মনোযোগ দিয়ে থাকে। তবে ট্রেজারি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা বিভাগ, পরিবেশ, খাদ্য ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ এবং ব্যবসা ও বাণিজ্য বিভাগ অভিবাসনকে শ্রমবাজার এবং রপ্তানি উন্নয়নের একটি অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখে।
প্রতিবেদনের লেখক এবং IfG-এর গবেষক সচিন সাভুর বলেন, “অনেকদিন ধরেই সরকারগুলো অভিবাসন নীতির উদ্দেশ্য এবং তা অর্জনের বাস্তবসম্মত উপায় নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে।
তারা প্রায়ই নেট মাইগ্রেশন এবং শ্রমবাজার সম্পর্কিত পরিসংখ্যান দেখে হঠকারী পরিবর্তন আনে।
একটি বার্ষিক অভিবাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে মন্ত্রীরা আগাম পরিকল্পনা করতে পারবেন এবং একটি আন্তঃবিভাগীয়, বাস্তবভিত্তিক অভিবাসন এজেন্ডা তৈরি করতে পারবেন যা সরকারের সামগ্রিক অগ্রাধিকার, প্রমাণ এবং স্বার্থের প্রতিফলন ঘটায়।”
নেট মাইগ্রেশন — অর্থাৎ আগমন এবং প্রস্থানের পার্থক্য — ২০২৩ সালের জুনে ৯,০৬,০০০ জনে পৌঁছেছিল, যা বরিস জনসন এবং ঋষি সুনাকের শাসনামলকে অন্তর্ভুক্ত করে।
এই সংখ্যা দেশজুড়ে ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং অভিযোগ ওঠে যে ব্রেক্সিটের পরও কনজারভেটিভ সরকার যুক্তরাজ্যের সীমান্তের উপর ‘নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে’ ব্যর্থ হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, একটি বার্ষিক পরিকল্পনা সরকারের অভিবাসন নীতিতে বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে পারে, যেমন:
°অভিবাসনের সুফল ও ক্ষতির ব্যাপারে আরও খোলামেলা মূল্যায়নের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
°স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য বিভাগের মধ্যকার বৈরী সম্পর্কের অবসান ঘটাবে।
°সরকারব্যাপী তথ্য ও স্বার্থ যাচাই করে সম্মিলিতভাবে গৃহীত একটি সমন্বিত কৌশল তৈরি করবে।
°নিয়োগকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলোর জন্য নীতিতে পূর্বানুমানযোগ্যতা নিশ্চিত করবে।
IfG বলছে, নেট মাইগ্রেশনের ওপর একটি ইচ্ছাধীন বার্ষিক সীমা কার্যকর নাও হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট রুটভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তা বার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য হতে পারে।
যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ এপ্রিল ২০২৫