TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

আইনে এআই-এর আগমন নিয়ে সতর্ক করলেন যুক্তরাজ্যের সিনিয়র বিচারপতি

যুক্তরাজ্যের শীর্ষ আদালতের এক সিনিয়র বিচারপতি জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন এমন সক্ষমতা অর্জন করেছে যে, মানুষ যেটি সমাধান করতে দুই বছর সময় নিত, সেটি এআই কয়েক মিনিটেই বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত দিতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, আদালতে এর অন্ধ ব্যবহার ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

লন্ডনে অনুষ্ঠিত লিগ্যাল গীক কনফারেন্সে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাস্টার অব দ্য রোলস স্যার জিওফ্রে ভস বলেন, “আজকের দিনে আইন পেশার প্রায় সব স্তরেই এআই ব্যবহৃত হচ্ছে—গবেষণা, চুক্তিপত্র রচনা থেকে শুরু করে জটিল নথি সংক্ষেপণ পর্যন্ত।”

তিনি এআই-কে তুলনা করেন “একটি চেইনসো”-এর সঙ্গে—“সঠিক হাতে এটি অসাধারণ শক্তিশালী, কিন্তু ভুল হাতে অত্যন্ত বিপজ্জনক।”

স্যার জিওফ্রে জানান, বড় ভাষা মডেল (LLMs) ব্যবহারে আইনজীবীরা তাদের কাজের দক্ষতা বাড়াতে পারেন। এই প্রযুক্তি দ্রুত জটিল দলিল সংক্ষেপণ করতে সক্ষম, ফলে সময় ও শ্রম অনেক কমে যায়।

তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “যদি কোনো মামলার রায় এআই দিয়ে কয়েক মিনিটে তৈরি হয়, সেটি বাস্তবে ভয়ংকর হবে, কারণ আদালতের সিদ্ধান্ত শুধু আইন নয়, মানবিক বিবেচনারও প্রতিফলন।”

স্যার জিওফ্রে জোর দিয়ে বলেন, এআই কখনও মানুষের অনুভূতি, সহমর্মিতা ও অন্তর্দৃষ্টিকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। তিনি বলেন, “বিচারকের দায়িত্ব শুধু আইনি বিশ্লেষণ নয়, বরং সমাজের ন্যায়ের বোধকে রক্ষা করা। মেশিন সেই বিবেচনা করতে পারে না।”

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, মেশিন লার্নিং সময়নির্ভর—অতএব সমাজ ও আইনের পরিবর্তনের সঙ্গে এটি দ্রুত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারে।

এই বছরের শুরুতে হাই কোর্ট আইনজীবীদের সতর্ক করেছে এআই টুলের অপব্যবহার বিষয়ে। কারণ সাম্প্রতিক দুটি মামলায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহার করে আদালতে ভুয়া উদ্ধৃতি জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রথম ঘটনাটি ঘটে কাতার ন্যাশনাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৮৯ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ মামলায়—যেখানে দাখিল করা ৪৫টি উদ্ধৃতির মধ্যে ১৮টি ছিল সম্পূর্ণ বানানো। আইনজীবী স্বীকার করেন, তিনি সার্বজনীন এআই টুল ব্যবহার করেছিলেন এবং যাচাই না করেই উদ্ধৃতি জমা দেন।

আরেক ঘটনায়, হ্যারিনগে ল’ সেন্টার-এর এক আইনজীবী একটি রেগুলেটরি রুলিং মামলায় পাঁচটি মিথ্যা নজির উদ্ধৃত করেন। পরে জানা যায়, তিনি সরাসরি এআই ব্যবহার না করলেও গুগল বা সাফারির প্রদত্ত এআই সংক্ষিপ্তসারের উপর নির্ভর করেছিলেন।

এই ঘটনাগুলোর পর কিংস বেঞ্চ ডিভিশনের সভাপতি ডেম ভিক্টোরিয়া শার্প তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন,
“যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার হয়, তা জনগণের আদালতের প্রতি আস্থাকে বিপন্ন করবে।”

তিনি আরও সতর্ক করেন, এ ধরনের ঘটনায় জড়িত আইনজীবীরা পাবলিক সতর্কতা, আদালত অবমাননা বা এমনকি পুলিশের তদন্তের মুখোমুখি হতে পারেন।

সিভিল লিটিগেশনে বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তাহির খান বলেন, অনেক ভুল ঘটে যখন আইনজীবীরা চ্যাটজিপিটি’র মতো সাধারণ টুল ব্যবহার করেন, অথচ আইনক্ষেত্রের জন্য তৈরি বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্ম Lexis Nexis ব্যবহার করেন না।

তিনি বলেন, “এআই ব্যবহার করলেও যাচাইয়ের দায়িত্ব আইনজীবীরই। আপনি বলতে পারবেন না যে, টুলটি ভুল করেছে—শেষ পর্যন্ত দায় আপনারই।”

সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

এম.কে

আরো পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী দূর্নীতিবাজদের ৪০০ মিলিয়নের ইউকে সাম্রাজ্যের খোঁজ

পুনর্ব্যবহারের প্লাস্টিক শনাক্তে ব্রিটিশ স্টোরে নতুন উদ্যোগ

ভুলভাবে বিদেশী স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগে লাইসেন্স হারিয়েছে ১০০ এর বেশি কেয়ারহোম

নিউজ ডেস্ক