4.5 C
London
November 20, 2024
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

ইটালি-আলবেনিয়া চুক্তি চিকিৎসা সংক্রান্ত নৈতিকতার লঙ্ঘনঃ এনজিও

তৃতীয় দেশে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলবেনিয়ার সঙ্গে করা ইটালির চুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত নৈতিকতা লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসা বেশ কয়েকটি এনজিও৷

১৫ নভেম্বর এই চুক্তিটির সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে সংস্থাগুলো৷ এই চুক্তির অধীনে কোনো সহযোগিতা না দিতেও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনজিওগুলো৷

বিবৃতিতে সই করেছে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস, ইমার্জেন্সি, সি-ওয়াচ, এসওএস মেডিটেরানিসহ আরো বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা৷

অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং মানবপাচারকারী চক্রগুলো ভেঙে দেয়ার লক্ষ্যে এই চুক্তিটি সফল করতে চান ইটালির অতি-ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি৷ চুক্তি অনুযায়ী, এই প্রকল্প আগামী পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে৷ এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ইউরো৷ ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় আনার পর দেশটির শেনজিন বন্দরের কেন্দ্রটিতে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করা হবে৷

পরে তাদের নেয়া হবে গজদারের তিনটি ভিন্ন অবকাঠামোতে৷ তিনটি অবকাঠামোর একটিতে রাখা হবে ‘ডিপোর্ট’ এর সিদ্ধান্ত পাওয়া অভিবাসীদের, দ্বিতীয়টিতে রাখা হবে আশ্রয়প্রার্থীদের এবং তৃতীয়টিতে রাখা হবে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা অভিযুক্ত অভিবাসীদের৷

যাদের আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর করা হবে তাদের আলবেনিয়া থেকে সরাসরি ইটালি নিয়ে যাওয়া হবে৷ আর যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে তাদের আলবেনিয়া থেকেই ডিপোর্ট করা হবে বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে৷

কিন্তু চুক্তিটি বাস্তবায়নের বাধার মুখে পড়ছে মেলোনি প্রশাসন৷ এ নিয়ে অভিবাসীদের দুটি দলকে আলেবনিয়া পাঠানো হলেও, আদালতের রায়ে তাদের ইটালি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে রোম৷

অভিবাসীদের আলবেনিয়ার নির্মিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রাখার যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখতে লুক্সেমবুর্গের ইউরোপীয় বিচার আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন ইটালির বিচারকেরা৷

অভিবাসীদের প্রথমে ইটালি নৌবাহিনীর জাহাজে এবং তারপরে আলবেনিয়ান কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে বেসরকারি সংস্থাগুলো৷ কারণ, চুক্তি অনুযায়ী শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ কোনো পুরুষ অভিবাসীকে আলবেনিয়া রাখা যাবে না৷

এনজিওগুলো বলছে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে কোনো উপযুক্ত বা গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপনা সেখানে নেই৷ তারা বলছে, বিপজ্জনক পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের যারা শারীরিক, মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের আলবেনিয়ার আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা উচিত নয়৷

এসব অভিবাসীর পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারসহ অন্যান্য গুরুতর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া উচিত বলেও মনে করে এনজিওগুলো৷

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ইটালি-আলবেনিয়া চুক্তি চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত নৈতিকতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে অভিবাসীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে৷’’

জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম এবং দ্য নাইটস অব মাল্টা-এর ইটালিয়ান রেসকিউ করপসের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোরও সমালোচনা করেছে এনজিওগুলো৷ তারা দাবি করেছে, সংস্থা দুইটি এই প্রকল্পে যুক্ত হয়ে স্পষ্টত মানবাধিকার লঙ্ঘনে ‘সহযোগী’ হিসাবে কাজ করছে৷

দ্য নাইটস অব মাল্টা দাবিটি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ সংস্থাটি বলেছে, আলবেনিয়া নিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো চিকিৎসক এবং নার্সেরা যুক্ত নন৷

সংস্থাটি আরো বলেছে, তাদের মেডিকেল টিম ২০০৮ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসীদের উদ্ধারে যুক্ত ইটালির জাহাজগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আসছে এবং সেটি অব্যাহত রয়েছে৷

নাইটস অব মাল্টা জানিয়েছে, ‘‘১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্রে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য তারা কাজ করছেন এবং এজন্য তারা গর্বিত৷ এই কর্মসূচিটি বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই৷’’

এই বিষয়টি নিয়ে আইওএম-এর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ই-মেইল করা হলেও, প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি৷

ইটালি সরকার বলেছে, আলবেনিয়ায় নির্মিত কেন্দ্রগুলোতে অভিবাসীদের অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত করা হবে৷ এই চুক্তিটিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ‘আউট-অব-বক্স চিন্তা’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন৷ তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেও ইটালি এই চুক্তির মধ্য দিয়ে একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করলো৷

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা চুক্তির প্রথম তিন মাস তদারকি করতে সম্মত হয়েছে এবং এজন্য তাদের একটি দল স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে অভিবাসীবাহী জাহাজে অবস্থান করেন৷

সূত্রঃ এপি

এম.কে
২০ নভেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

শিগগিরই ভারতে সফর করবেন ভ্লাদিমির পুতিন

ভারত ভাঙ্গনের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করলেন কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী

অলিম্পিকে নিষিদ্ধ হিজাব, যা বললেন অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম বক্সার