কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় অনলাইনে রিমোট পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম হিসাববিদদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্ট্যান্টস (ACCA)। সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী মার্চ থেকে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া পরীক্ষার্থীদের আর ঘরে বসে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না; সবাইকে সশরীরে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে মূল্যায়নে অংশ নিতে হবে।
প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার সদস্য এবং পাঁচ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করা ACCA বলছে, অনলাইন পরীক্ষার নিরাপত্তা বজায় রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। বিশেষ করে এআই–ভিত্তিক টুল সহজলভ্য হওয়ায় নকলের কৌশলগুলো এতটাই উন্নত হচ্ছে যে প্রচলিত নজরদারি ও সুরক্ষা ব্যবস্থায় তা ঠেকানো যাচ্ছে না।
ফাইন্যানশিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ACCA–র প্রধান নির্বাহী হেলেন ব্র্যান্ড বলেন, নকল প্রতিরোধে সংস্থাটি ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও যারা নিয়ম ভাঙতে চায়, তারা আরও দ্রুতগতিতে নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছে। তার মতে, প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি—বিশেষ করে এআই—এই সংকটকে একটি ‘টার্নিং পয়েন্টে’ নিয়ে এসেছে।
কোভিড–১৯ মহামারির সময় লকডাউনের কারণে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় অনলাইন ও রিমোট পরীক্ষা চালু করা হয়েছিল। সে সময় এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কার্যকর বিকল্প হলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর নকল ও অনৈতিক আচরণের অভিযোগ বাড়তে থাকে।
২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের হিসাব ও নিরীক্ষা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফাইন্যানশিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (FRC) জানায়, পেশাগত পরীক্ষায় নকল একটি “চলমান ও গুরুতর সমস্যা”। তদন্তে দেখা যায়, এমনকি শীর্ষস্থানীয় বা টিয়ার–ওয়ান অডিটরদের মধ্যেও নকলের ঘটনা ঘটেছে।
এই তালিকায় রয়েছে ‘বিগ ফোর’ অডিট ফার্ম—কেপিএমজি (KPMG), পিডব্লিউসি (PwC), ডেলয়েট (Deloitte) ও ইওয়াই (EY)—এছাড়া মাজর্স, গ্রান্ট থরন্টন ও বিডিওর মতো বড় প্রতিষ্ঠান। নকল–কেলেঙ্কারির জেরে বিশ্বজুড়ে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বহু মিলিয়ন ডলারের জরিমানাও আরোপ করা হয়েছে।
২০২২ সালেই ইওয়াই যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে সমঝোতায় নৈতিকতা পরীক্ষায় নকল ও পরবর্তী তদন্তে বিভ্রান্তির অভিযোগে রেকর্ড ১০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে সম্মত হয়, যা এই সংকটকে আরও সামনে নিয়ে আসে।
এআই–এর দ্রুত বিস্তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পেশাগত সংস্থাগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ACCA মনে করছে, অনলাইন পরীক্ষার তুলনায় সশরীরে পরীক্ষা নেওয়াই এখন সবচেয়ে কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য পদ্ধতি।
যদিও ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস (ICAEW) জানিয়েছে, নকলের অভিযোগ এখনও বাড়ছে, তবুও তারা সীমিত পরিসরে কিছু পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সুযোগ রাখছে। তবে হেলেন ব্র্যান্ডের মতে, বর্তমানে খুব কম সংখ্যক উচ্চঝুঁকিপূর্ণ পেশাগত পরীক্ষা আছে, যেখানে রিমোট নজরদারির মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া নিরাপদ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

