18.2 C
London
May 21, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

কাজের নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাজ্যে যৌন পেশায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে নারী আশ্রয়প্রার্থীদের

যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে পালিয়ে আসা অনেক নারী যুক্তরাজ্যে চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়ে যৌন পেশায় যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি প্রায় অর্ধেক নারী ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন স্যানিটারি পণ্যও কিনতে পারছেন না।

‘Women for Refugee Women’ নামের একটি দাতব্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোম অফিসের দেয়া আশ্রয়প্রার্থীদের কাজ নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে আশ্রয়প্রার্থী নারীদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে ৩৩টি দেশের ১১৭ জন নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, ১০% নারী যৌন পেশায় যুক্ত হয়েছেন, অনেকেই সন্তানদের খাবার জোগাড় করতে বাধ্য হয়ে এটি করেছেন। এছাড়া ৩৮% নারীকে নিপীড়নমূলক সম্পর্ক বা পরিস্থিতিতে থাকতে হয়েছে। প্রায় অর্ধেক নারী স্যানিটারি পণ্য কেনার সামর্থ্য হারিয়েছেন এবং ৮০% নারী পোশাক, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা মোবাইল ফোনের ক্রেডিট কেনার মতো ন্যূনতম খরচ চালাতেও অপারগ।

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে নারীদের অনুপাত এক-পঞ্চমাংশ, এবং তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ নারী নিজ দেশে ধর্ষণ বা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

‘Safety and Survival: How the Work Ban Fuels Violence Against Women Seeking Asylum’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়ের আবেদনকারী একজন নারী গৃহহীন হয়ে পড়েন, নিপীড়নের শিকার হন এবং শেষ পর্যন্ত যৌন পেশায় যুক্ত হতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, “আমি টাকার জন্য বাণিজ্যিক যৌনকর্মী হয়ে গিয়েছিলাম, কখনো কখনো এক রাত ঘুমানোর জায়গা পাওয়ার জন্যও শারীরিক সম্পর্ক করতে হতো।”

আরেকজন নারী, যিনি তার ল্যাকটোজ-অসহিষ্ণু শিশুর জন্য খাবার জোগাড় করতে মরিয়া ছিলেন। সাহায্যের আশায় একটি ডেটিং সাইটে নাম লেখান। কিন্তু সেখানে তিনি ধর্ষণের শিকার হন।

আরেক নারী অবৈধভাবে একজন গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ নেন, ঘণ্টাপ্রতি মাত্র £১.৫০ পেতেন, কিন্তু অভিবাসন পরিস্থিতির কারণে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। তিনি বলেন, “আমি যেন অন্যদের দাস হয়ে গিয়েছিলাম।”

সংস্থাটি লেবার পার্টির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন আশ্রয়প্রার্থীদেরকে ছয় মাস পর থেকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়—অন্যথায় তারা টাকার অভাবে নির্যাতন ও শোষণের শিকার হতে থাকবে।

গবেষণা দলের মন্তব্য, “আমাদের প্রতিবেদনে প্রমাণ হয়েছে, কাজ নিষেধাজ্ঞা নারীদের নিপীড়নের মধ্যে আটকে রেখেছে কিংবা যৌন বা অবৈধ পেশায় বাধ্য করেছে। ৮৫% নারী উদ্বিগ্ন বা হতাশ এবং ৪৩% আত্মহত্যার কথা ভাবছেন। এটি একটি ভয়াবহ সংকট।”

সংস্থার সহ-পরিচালক আন্দ্রেয়া ভুকোভিচ বলেন, “এই ফলাফল যতটা উদ্বেগজনক, নীতিনির্ধারকদের কাছে তা মোটেও অপ্রত্যাশিত হওয়া উচিত নয়। কারণ, দরিদ্র ও কর্মহীন অবস্থায় থাকা নারীরা স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়বেন।”

হোম অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীদের কাজ করার নিয়মে কোনো পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেই। তারা বলেন, “আমরা একটি ন্যায্য, দক্ষ ও টেকসই আশ্রয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি নারীদের প্রতি সহিংসতা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। আশ্রয়প্রার্থীদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য আবাসন ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৭ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে আশ্রয় আবেদনে ব্যাকলগঃ আরো তিন বছর হোটেলে রাখা হতে পারে আশ্রয়প্রার্থীদের

ব্রিটেনে ২০২১ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় যেভাবে আবেদন করবেন

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের আউটসোর্সিং বিভিন্ন পরিষেবার উপর নাখোশ করদাতারা