TV3 BANGLA
বাংলাদেশযুক্তরাজ্য (UK)

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী দূর্নীতিবাজদের ৪০০ মিলিয়নের ইউকে সাম্রাজ্যের খোঁজ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে বিলাসবহুল সম্পত্তি কেনায় মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেছিল বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়।

০৫ আগস্ট ২০২৪ সালে ধীরে ধীরে ঢাকা শহরকে পেছনে ফেলে সামরিক হেলিকপ্টারে শেখ হাসিনা যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন জনতা তার প্রাসাদতুল্য বাসভবনে হামলা চালায়।

শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে প্রায় ১,০০০ বাংলাদেশি নিহত এবং অসংখ্য আহত হয়েছিলেন তার নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা। ০৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান, যেখানে তিনি এরপর হতে অবস্থান করছেন।

১৬ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটার পর, বাংলাদেশ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকার ক্ষমতাচ্যুত সরকারের দুর্নীতির মাধ্যমে হারানো অর্থ উদ্ধারের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে। দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দাবি করেছে, এই অর্থ পুনরুদ্ধার করা জরুরি।

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের দাবি, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দলের সাথে যুক্ত কিছু পরিবার ও ব্যবসায়ী অবৈধ উপায়ে বিলিয়ন পাউন্ড সম্পদ অর্জন করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে গৃহীত বিশাল ঋণ রয়েছে যা কখনও পরিশোধ করা হয়নি। এসব অর্থ সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার প্রচলিত ‘হুন্ডি’ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানকারীরা দাবি করেছেন যে এই অর্থের একটি বড় অংশ যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রায় £১৩ বিলিয়ন মূল্যের সম্পদ সনাক্ত করতে কাজ করছে, যার মধ্যে লন্ডনে রয়েছে সম্পত্তির উল্লেখযোগ্য অংশ।

অবজারভার এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশি প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি অর্জন করেছেন।

এই সম্পত্তিগুলোর মালিকানা বেশিরভাগই যুক্তরাজ্য এবং অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে ক্রয় করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং শেখ হাসিনা সরকারের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। তবে এই সম্পদের মালিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এই অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। অভিযোগ রয়েছে যে বড় ব্যাংক, আইন সংস্থা এবং প্রপার্টি এজেন্টরা এই চুক্তিগুলোর জন্য বিশাল পরিমাণ ফি গ্রহণ করেছে, কিন্তু অর্থের উৎস সম্পর্কে যথাযথ তদন্ত করেনি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, যুক্তরাজ্য এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লন্ডনকে বিশ্বব্যাপী উদাহরণ হিসেবে গড়ে তোলার “প্রথম পরীক্ষার” সম্মুখীন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম ও সম্পদের তালিকাঃ

সালমান এফ রহমানঃ

শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা।

অভিযোগ: মানি লন্ডারিং, প্রায় £১ বিলিয়ন ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা।

সম্পদ: লন্ডনের গ্রসভর্ন স্কয়ারে সাতটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীঃ

প্রাক্তন ভূমি মন্ত্রী,

সম্পত্তিঃ যুক্তরাজ্যে £১৬০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি।

বসুন্ধরা গ্রুপ (সোবহান পরিবার):

সম্পদঃ সারে এবং লন্ডনে £১৩ মিলিয়ন মূল্যের সম্পত্তি।

অভিযোগ: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা।

নাসা গ্রুপ (নাজরুল মজুমদার):

সম্পদ: কেনসিংটনে £৩৮ মিলিয়ন মূল্যের পাঁচটি সম্পত্তি।

অভিযোগ: অর্থ পাচার।

যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনার জন্য বাংলাদেশের আওয়ামী সুবিধাভোগীদের অনেকেই অফশোর কোম্পানি ব্যবহার করেছেন বলে খবরে জানা যায়। অভিযোগ রয়েছে, এগুলোর মাধ্যমে লেনদেন করায় মালিকানা লুকানো সহজ হয়েছে।

যুক্তরাজ্য সরকারের অনেক সংসদ সদস্য এখন দাবি করছেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। তাদের মতে, ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রকদের আরও শক্তিশালী তদন্ত প্রক্রিয়া প্রয়োজন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “যে সম্পদগুলো সন্দেহজনক, সেগুলো জব্দ করার জন্য একটি কার্যকরী ব্যবস্থা চালু করা উচিত।”

এই প্রতিবেদনটিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সহযোগিতার আহ্বান জানায়, যাতে দুর্নীতির অর্থ উদ্ধার এবং বাংলাদেশের পুনর্গঠন সম্ভব হয়।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০১ ডিসেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

হোম অফিসের অপেশাদার আচরণে বিস্মিত আদালত

আবারও লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হলেন সাদিক খান

দিনে আসছে ৯০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স