16.4 C
London
October 5, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

চাকুরিপ্রত্যাশীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচনে যুক্তরাজ্য সরকারের পদক্ষেপ

যুক্তরাজ্যে চাকুরি খোঁজার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে সরকার। কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী অ্যালিসন ম্যাকগাভার্ন ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে কর্মসংস্থান সহায়তা কেন্দ্রগুলো (জবসেন্টার) আর কাউকে বাধ্য করবে না “যে কোনো চাকুরি” নিতে। বরং প্রত্যাশীদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক, দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার গঠনের সহায়তায় জোর দেওয়া হবে।

এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী রক্ষণশীল (কনজারভেটিভ) সরকারের সেই নীতি বাতিল করা হলো, যেখানে চাকুরিপ্রার্থীদের অস্থায়ী ও কম বেতনের চাকরি নিতে বাধ্য করা হতো, তা যত অনিরাপদই হোক না কেন।
অ্যালিসন ম্যাকগাভার্ন বলেন, বর্তমান সরকার চায়, মানুষ শুধু একটি চাকুরি না পাক—বরং এমন একটি পেশাজীবন গড়ে তুলুক যা টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ এবং উন্নতির পথ দেখায়। এজন্য কর্মসংস্থান সহায়তা কাঠামোয় মৌলিক সংস্কার আনা হচ্ছে।
তিনি জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির সহায়তায় কর্মসংস্থান পরামর্শকদের (জব কোচদের) দাপ্তরিক কাজের চাপ কমানো হবে, যাতে তারা বেকার মানুষের সঙ্গে আরও মানবিক, সময়সাপেক্ষ পরামর্শ দিতে পারেন। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে বেকার, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, কিংবা প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন—তাদের জন্য আলাদাভাবে সহায়তার সুযোগ তৈরি করা হবে।
নতুন ব্যবস্থায় প্রত্যেক চাকুরিপ্রত্যাশীর সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহ করে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা হবে, যাতে কর্মসংস্থান সহায়তা কেন্দ্রের পরামর্শদাতা (কর্মপরিচালক) ব্যক্তিভিত্তিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। আগের নিয়মে যেখানে কাউকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দেওয়া হতো, সেখানে এখন একজন ব্যক্তি তার পুরো জীবন ও সমস্যার কথা খুলে বলার সুযোগ পাবেন।
মন্ত্রী জানান, “আমি এমন কোনো সমাজ চাই না যেখানে কেউ ভাবে—‘আমার কোনো দরকার নেই, কেউ আমায় চায় না।’ আমরা এমন একটি ব্যবস্থা গড়তে চাই যেখানে প্রত্যেককে মর্যাদা দেওয়া হবে।”
এই সংস্কারের অংশ হিসেবে যারা শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষম নন, তাদের জন্য বরাদ্দকৃত আর্থিক সহায়তায় কিছুটা কাটছাঁট হবে। তবে এর বিপরীতে প্রত্যেককে নতুনভাবে সহায়তা দেওয়া হবে—যেমন চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং সম্প্রসারিত কর্মসংস্থান কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশেষায়িত পরামর্শ ও পুনর্বাসন সহায়তা।
প্রথম বছর এই ব্যবস্থার পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা ধীরে ধীরে ১ বিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সহায়তা ব্যবস্থায় ২০৩০ সালের মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবে, বিপরীতে আরও বহু মানুষ দারিদ্র্যের শিকার হবে।
ম্যাকগাভার্ন বলেন, তিনি এই সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন, তবে পুরো পদ্ধতি বদলে দিলে আরও মানুষ উপকৃত হবে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত মাত্র প্রতি ছয়জন নিয়োগদাতার মধ্যে একজন সরাসরি কর্মসংস্থান বিভাগে যুক্ত। এই সংযোগ বাড়ালে আরও ভালোভাবে চাকুরিপ্রার্থীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরি খুঁজে দিতে পারবে সরকার।
তিনি বলেন, “আগে বলা হতো—‘যেকোনো চাকুরি, তার চেয়ে ভালো চাকুরি, তারপর ক্যারিয়ার’। আমরা বলছি—‘প্রথমেই ক্যারিয়ার ভাবো’। যেমন—কেউ যদি এনএইচএস-এ (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) ঢোকে, তাহলে তার উন্নতির সুযোগ থাকে, ভবিষ্যতেও ভালো অবস্থানে যেতে পারে। এটাই স্থায়ী সমাধান।”
মন্ত্রী তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কোভিড-১৯ এর প্রভাব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বহু তরুণ। অনেককে কর্মমেলা বা সাক্ষাৎকারে যাওয়ার জন্য পরামর্শদাতার সাহায্যে যেতে হয়, যা সামাজিক উদ্বেগের মাত্রা নির্দেশ করে। তিনি বলেন, “আমরা কোভিড-প্রজন্মের প্রতি দায় এড়িয়ে যেতে পারি না।”
এদিকে, এই সংস্কার নিয়ে পার্লামেন্টে বিরোধ দেখা দিয়েছে। প্রায় ১৭০ জন এমপি প্রকাশ্যে কিংবা ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছেন, তারা এই প্রস্তাবে আপত্তি জানাবেন অথবা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
অ্যালিসন ম্যাকগাভার্ন বলেন, “মানুষ ভীত—আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। আগে যা হয়েছে, তার ভিত্তিতে তাদের ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি যে ব্যবস্থাটি সত্যিই বদলেছে, তখন এই ভয় দূর হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তখনই ভালোভাবে কাজ করে, যখন অর্থনীতি মানুষের জীবনমান উন্নত করতে পারে। শুধু ভাতা দিয়ে বৈষম্য কমানো যাবে না—আমাদের অর্থনীতিকেও পাল্টাতে হবে, যাতে সবাই পায় সুযোগ, বিকাশ এবং মর্যাদা।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
২৯ মে ২০২৫
এম.কে

আরো পড়ুন

ব্রিটিশ মন্ত্রী ও সাংবাদিকসহ ৫৪ জনের উপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা

এনএইচএস ক্যান্সার সনাক্তকরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলসের সফলতা

উচ্চশিক্ষায় ঋণ–নির্ভরতা, সংকটে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা