জেমস বন্ড সিরিজ এক বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। কারণ অ্যামাজন ঘোষণা করেছে তারা ব্রকলি পরিবার থেকে গুপ্তচর ভিত্তিক সিরিজের ফ্র্যাঞ্চাইজি-এর ” নিয়ন্ত্রণ” অর্জন করেছেন।
অ্যামাজন এমজিএম স্টুডিওস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে তারা ব্রিটিশ-আমেরিকান প্রযোজক বারবারা ব্রকলি এবং মাইকেল জি উইলসনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন। উভয়েই কিংবদন্তি চলচ্চিত্র প্রযোজক আলবার্ট ব্রকলির উত্তরসূরি এবং দীর্ঘদিন ধরে বন্ড সিরিজের দেখভাল করে আসছিলেন।
অ্যামাজনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, চুক্তির আর্থিক শর্তাবলী গোপন রাখা হয়েছে।
তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্পোরেশন নিশ্চিত করেছে এখন থেকে জেমস বন্ডের সিরিজ পরিচালনার জন্য অ্যামাজন, উইলসন এবং ব্রকলি একটি নতুন যৌথ উদ্যোগ গঠন করেছে, যেখানে অ্যামাজন সম্পূর্ণ সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করবে।
চুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এ ভক্তদের কাছে নতুন বন্ড অভিনেতার জন্য পরামর্শ চান।
তিনি প্রশ্ন করেন, “পরবর্তী বন্ড হিসেবে কাকে বেছে নেবেন?”
এই চুক্তি দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষমাণ নতুন বন্ড সিনেমার প্রযোজনা শুরু করার পথ খুলে দিতে পারে এবং অ্যামাজন প্রাইম স্ট্রিমিং সার্ভিসের জন্য অসংখ্য টিভি সিরিজ তৈরি করতে পারে।
অ্যামাজন ২০২১ সালে ৮.৪৫ বিলিয়ন ডলারে (£৬.৬৮ বিলিয়ন) এমজিএম স্টুডিও কিনে নেয় এবং এর মাধ্যমে ৪,০০০-এরও বেশি সিনেমা ও ১৭,০০০-এর বেশি টিভি’শো প্রদর্শন করেছে।
বন্ড সিরিজের শুরুর দিকে প্রায় প্রতি বছরই নতুন সিনেমা মুক্তি পেত। ডক্টর নো (১৯৬২) থেকে লাইসেন্স টু কিল (১৯৮৯) পর্যন্ত ১৬টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল এই সিরিজের।
কিন্তু ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৫ সালের গোল্ডেনআই- পর্যন্ত ছয় বছরের বিরতি ছিল বন্ড সিরিজের সবচেয়ে দীর্ঘ।
বর্তমানে, ২০২১ সালে “নো টাইম টু ডাই” মুক্তির পর চার বছর পার হলেও নতুন সিনেমার কোনো ঘোষণা নেই, ফলে এটি ০০৭-এর ইতিহাসের দীর্ঘতম বিরতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে।
বর্তমান চুক্তিতে সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার মাধ্যমে অ্যামাজন এখন থেকে উইলসন ও ব্রকলির অনুমতি ছাড়াই বন্ড সিরিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে।
বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র ম্যাগাজিন Variety-এর নির্বাহী সম্পাদক স্টিভেন গেইডোস বলেন, “আমি প্রথমে এই চুক্তিতে অবাক হয়েছিলাম, কারণ আগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে ব্রকলি এবং উইলসনের সঙ্গে অ্যামাজনের সম্পর্ক ভালো ছিল না।”
তিনি বলেন, “তবে তারা দুজনই বয়স্ক হয়ে গেছেন এবং এত বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি পরিচালনা করা বিশাল কাজ। এটি এমন একটি রেকর্ড যা কেউ ভাঙতে পারবে না। তারা বারবার সাফল্য এনে দিয়েছেন।”
গেইডোস আরও বলেন, “আমি নিশ্চিত যে অ্যামাজন এখন ‘বন্ড ইউনিভার্স’ প্রসারিত করবে, যেমন তারা ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ এবং ‘স্টার ওয়ার্স’ নিয়ে করেছে। এটি ১০০% নিশ্চিত।”
অ্যামাজনের প্রাইম ভিডিও এবং এমজিএম স্টুডিওস-এর প্রধান মাইক হপকিন্স বলেন, “উইলসন এবং ব্রকলির অবদান এবং তাদের অটুট নিষ্ঠার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তারা বন্ড সিরিজের ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন, যা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ভক্তদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকদের জন্য ০০৭-এর নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।”
৮৩ বছর বয়সী মাইকেল জি উইলসন বলেন, “আমার ০০৭ ক্যারিয়ার প্রায় ৬০ বছরের, এবং এখন আমি প্রযোজনার কাজ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি ভবিষ্যতে শিল্প ও দাতব্য প্রকল্পে মনোযোগ দিতে চাই। তাই, আমি এবং বারবারা মনে করি, অ্যামাজন এমজিএম স্টুডিওস এখন থেকে বন্ড সিরিজের দায়িত্ব নেবে।”
৬৪ বছর বয়সী বারবারা ব্রকলি বলেন, “আমার পুরো জীবন ছিল বন্ড ফ্র্যাঞ্চাইজির ঐতিহ্য রক্ষা ও বিস্তারের জন্য উৎসর্গ করা।”
তিনি বলেন, “আমি চারজন অসাধারণ অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সম্মান পেয়েছি এবং অসংখ্য প্রতিভাবান শিল্পীর সঙ্গে কাজ করেছি।”
“নো টাইম টু ডাই-এর সমাপ্তির পর এবং মাইকেলের অবসর গ্রহণের সাথে সাথে আমি মনে করি এখন সময় এসেছে আমার অন্যান্য প্রকল্পের দিকে মনোযোগ দেওয়ার।”
উল্লেখ্য বারবারা ব্রকলি হলেন ক্যাবি ব্রকলির কন্যা, যিনি প্রযোজক হ্যারি সাল্টজম্যানের সঙ্গে মিলে বন্ড সিরিজের সূচনা করেছিলেন।
তিনি ১৯৮৩ সালে “অক্টোপাসি” তে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৮৭ সালে “দ্য লিভিং ডেলাইটস”-এ সহযোগী প্রযোজক ছিলেন। তার প্রথম সম্পূর্ণ প্রযোজক হিসেবে কাজ ১৯৯৫ সালের “গোল্ডেনআই” সিনেমায়।
উইলসন ক্যাবি ব্রকলির সৎপুত্র এবং একজন আইনজীবী। তিনি ১৯৭২ সালে ব্রকলির “ইয়ন প্রোডাকশন”-এ যোগ দেন এবং ১৯৭৯ সালের “মুনরেকার”-এ নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন। এরপর ১৯৮৫ সালের “অ্যা ভিউ টু অ্যা কিল” থেকে প্রধান প্রযোজক হন।
তারা একসঙ্গে বন্ডকে বিশ্বের অন্যতম সফল ফ্র্যাঞ্চাইজিতে পরিণত করেন, যার মোট আয় ৭.৮ বিলিয়ন ডলার, যা শুধুমাত্র মার্ভেল, স্টার ওয়ার্স, হ্যারি পটার এবং স্পাইডার-ম্যানের পরে অবস্থান করছে।
বন্ডের সবচেয়ে সফল সিনেমা এখনো ২০১২ সালের “স্কাইফল”, যা ১.১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল।
এখন দেখার বিষয়, অ্যামাজন কীভাবে নতুন যুগের জেমস বন্ড তৈরি করে এবং ভক্তদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫