ইউরোপের রাজনীতিতে আবারো আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার বিষয়ক প্রধান থিয়েরি ব্রেটন জানিয়েছেন, ট্রাম্প ২০২০ সালে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনকে সরাসরি বলে দিয়েছিলেন যে ইউরোপ যদি কখনো আক্রমণের মুখে পড়ে, তবে যুক্তরাষ্ট্র কখনই আপনাদের সাহায্য করতে কিংবা সমর্থন দিতে আসব না। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি ইভেন্ট চলাকালীন ওই ঘটনাটি জানান ব্রেটন।
এ দিকে শুরু হয়েছে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারির ভোট। এতে জয়ী হওয়ার পথে আছেন ট্রাম্প। এমন অবস্থায় নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অস্ত্র উৎপাদন করতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আহ্বান জানান ব্রেটন।
একাধিক ইইউ কর্মকর্তা এবং কূটনীতিক সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইউরোপ মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের বাইরেও নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনকে সহায়তা পাঠাতে গিয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর গোলাবারুদের মজুদ শেষ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য যে, ইউরোপের নিরাপত্তায় আর ভূমিকা রাখতে চান না ট্রাম্প। তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি নিয়মিত ন্যাটোর পেছনে অর্থ ব্যয়ের বিরোধিতা করেছেন। আবার একই সাথে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ অন্য পশ্চিমা বিরোধী নেতাদেরও প্রশংসা করেছেন।
এর মধ্যে ট্রাম্পের আবারো ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো গত কয়েক দশক ধরে তাদের সামরিক বাহিনীর পেছেন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। অপর দিকে ব্যয় ক্রমে বাড়িয়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়েও ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ইউরোপ বিশ্বাস করে, যদি কোনো যুদ্ধ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই তাদের রক্ষা করবে। তবে ট্রাম্প সেই সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছিলেন। তিনি ও তার দল ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নের বিরুদ্ধেও ছিলেন বলে জানা যায়। তাছাড়া দিন দিন ইউক্রেনের প্রতি মার্কিনিদের সমর্থন কমছে। এমনকি রিপাবলিকানদের বাঁধার কারণে ইউক্রেনের জন্য প্রয়োজনীয় মার্কিন তহবিলও পাস করা যাচ্ছে না।
ইইউর একজন সিনিয়র কূটনীতিক সিএনএনকে বলেন, যখন ট্রাম্প এসেছিলেন তখন আমরা হঠাৎ করে আবিষ্কার করি যে, যুক্তরাষ্ট্র আসলে সবসময় ইউরোপকে বাঁচাতে আসবে না। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে তারা কিছু করবে না।
ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন এই নতুন বাস্তবতা ইউরোপকে নিজের নীতি পর্যালোচনা করতে বাধ্য করেছিল। দেশগুলো এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে- ইউরোপকে এমন একটি ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই তারা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে।
ইউরোপীয় কিছু কূটনীতিক জানিয়েছেন, ট্রাম্প চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে আপাতত শান্ত থাকা এবং ইউরোপকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রমে দূরে সরিয়ে নেয়া। এক ইইউ কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ব্রাসেলস ট্রাম্পের কারণে বিভ্রান্ত হতে পারে না। ট্রাম্প যদি ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সমর্থন বন্ধ করতে চান তাহলে আমাদের উচিত সে দিকে বেশি মনোযোগ না দেয়া। আমাদের পরিপক্ব হতে হবে এবং যথারীতি কাজ চালিয়ে যেতে হবে। কারণ এই যুদ্ধ শেষ হলেও এর পরিণতি ইউরোপই বহন করবে, যুক্তরাষ্ট্রের নয়।
ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্ড বলেন,
এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা চান না ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরুক। কারণ ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ইউরোপের জন্য হুমকি হবে। তার প্রথম মেয়াদে যেসব নীতি দেখা গেছে, তা অব্যাহত থাকলে আটলান্টিকের দুই পাড়ের মধ্যকার সম্পর্ক হয়তো আর কখনো একই রকম হবে না। ইউরোপের জন্য সব থেকে বড় সমস্যা হলো যে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা শেষ করতে তাদের আরো অনেক বছর, এমনকি কয়েক দশকও লাগতে পারে।
সূত্রঃ সিএনএন
এম.কে
২০ জানুয়ারি ২০২৪