24.6 C
London
July 8, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ডিকেন্সিয়ান দারিদ্র্যে ডুবে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের শিশু—‘টু চাইল্ড লিমিট’ তুলে দেওয়ার দাবি তুঙ্গে

ইংল্যান্ডের শিশুদের অনেকেই এখন এমন দারিদ্র্যে বাস করছে যা চার্লস ডিকেন্সের কল্পনারও বাইরে — এমন চিত্র উঠে এসেছে শিশু কমিশনার ডেম র‍্যাচেল ডি সুজা (Dame Rachel de Souza)–এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে। ছেঁড়া বিছানা, ইঁদুরে কাটা ঘর, গোসলের পানির সংকট, নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ—এসবই এখন বহু শিশুর জন্য ‘নর্মাল’ (normal) হয়ে উঠেছে।

রিপোর্টে বলা হয়, শিশুরা এখন আর দারিদ্র্যকে ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট কনসেপ্ট’ (abstract concept) হিসেবে দেখে না, বরং বাস্তব জীবনের কষ্ট হিসেবেই ব্যাখ্যা করে। তারা চায় একটি নিরাপদ বাসা, যেখানে ছাঁচ বা ইঁদুর থাকবে না, বিছানা থাকবে পুরো শরীর মেলবার মতো, হোমওয়ার্ক করার স্থান থাকবে, আর থাকবে একটি গোসলঘর যেখানে গোপনীয়তা রক্ষা হয়।

ডি সুজা বলেন, “আমি শিশুদের কথাবার্তায় ভয়ংকর পরিবর্তন দেখছি। বড়দের বিষয় এখন ছোটরাও তীব্রভাবে অনুভব করছে।” তিনি বলেন, এমন একটি দেশে—যেটি বিশ্বের অন্যতম ধনী—সেখানে এভাবে শিশুদের বেড়ে ওঠা সত্যিই লজ্জার।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ৪৫ লাখ শিশু দারিদ্র্যে বাস করছে, যা একটি রেকর্ড। অথচ লেবার (Labour) সরকারের প্রতিশ্রুত ‘চাইল্ড পোভার্টি স্ট্র্যাটেজি’ (Child Poverty Strategy) এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এর অন্যতম কারণ ‘টু-চাইল্ড লিমিট’ (Two-child limit) নিয়ে সরকারের দ্বিধা।

এই সীমা চালু হয় ২০১৭ সালে কনজারভেটিভ (Conservative) সরকারের আমলে। নিয়ম অনুযায়ী, যেসব পরিবারে দুইয়ের বেশি শিশু আছে, তারা অতিরিক্ত সন্তানের জন্য ইউনিভার্সাল ক্রেডিট (Universal Credit) বা চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট (Child Tax Credit) পায় না। চাইল্ড পোভার্টি অ্যাকশন গ্রুপ (Child Poverty Action Group) বলছে, এই সীমার কারণে প্রতিদিন ১০৯টি শিশু দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

ইন্সটিটিউট ফর ফিসকাল স্টাডিজ (Institute for Fiscal Studies) হিসাব করেছে, এই নীতি বাতিল করতে সরকারের বছরে প্রায় £৩.৪ বিলিয়ন খরচ হবে, তবে এতে ৫ লাখ শিশু আপেক্ষিক দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে।

শিশু কমিশনার বলেছেন, শিশুদের দারিদ্র্য দূর করতে কোনও ‘কুইক ফিক্স’ (quick fix) নেই, তবে ‘টু-চাইল্ড লিমিট’ বাতিল করাই হতে হবে যেকোনো কৌশলের ভিত্তি।

রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, শিশুরা সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার পাচ্ছে না, কেউ কেউ বাস করছে ছোট্ট অস্বাস্থ্যকর ঘরে। অনেকে দীর্ঘ সময় অস্থায়ী বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট (bed and breakfast) হোটেলে থাকতে বাধ্য হচ্ছে—যা আইনের সীমা ছয় সপ্তাহ হলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না।

ডি সুজা আহ্বান জানান, শিশুদের জন্য ভাতার ওপর ‘ট্রিপল-লক’ (triple-lock) চালুর, যাতে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলে। সেইসঙ্গে সব স্কুল পড়ুয়া শিশুর জন্য ফ্রি বাস ট্রাভেল (free bus travel) চালু করার কথাও বলেন তিনি।

জাতীয় স্কুল প্রধানদের সংগঠন NAHT–এর প্রধান পল হুইটম্যান (Paul Whiteman) বলেন, “শিক্ষকেরা এখন স্কুলে খাবার বিতরণ করছেন, হিটিং চালু রাখছেন, এমনকি কাপড় ধোয়ার ব্যবস্থাও করছেন—কিন্তু এটি শিক্ষকের কাজ নয়। এটি সরকারের সমন্বিত উদ্যোগে মোকাবিলা করা উচিত।”

সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা ‘চাইল্ড পোভার্টি’ (child poverty) কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এজন্য আমরা £১ বিলিয়ন মূল্যের একটি ‘ক্রাইসিস সাপোর্ট প্যাকেজ’ (crisis support package) ঘোষণা করেছি। এর আওতায় ছুটির সময়েও দরিদ্র শিশুদের খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।”

তিনি আরও জানান, ফ্রি ব্রেকফাস্ট ক্লাব (free breakfast clubs) সম্প্রসারণ, £৩৯ বিলিয়ন সামাজিক ও সাশ্রয়ী আবাসনে বিনিয়োগ এবং ইউনিভার্সাল ক্রেডিটে ‘ফেয়ার রিপেমেন্ট রেট’ (fair repayment rate) চালুর মাধ্যমে ৭ লাখ দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৮ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

বাকিংহামে নয় বালমোরালে: প্রাচীন প্রথা ভেঙে নির্বাচিত হবেন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাজ্যে ২০২১ সালের বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দিক

অনলাইন ডেস্ক

অতি দ্রুত ছড়ায় করোনার ব্রাজিলিয়ান স্ট্রেইন

নিউজ ডেস্ক