৫০ বছর আগে মাত্র দেড় মাস বয়সে মায়ের কোল থেকে নরওয়ে যেতে বাধ্য হওয়া এলিজাবেথ ফিরোজা ফিরলেন তার মায়ের কাছে। যদিও জন্মদাত্রী মাকে খুঁজে পেতে এলিজাবেথের এই যাত্রা মোটেই সহজ ছিল না।
বৃহস্পতিবার মাদারীপুরের শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামের সরদার বাড়িতে দেখা মিলে মা-মেয়ের। শুরু হয় দুজনের অসাধারণ এক যাত্রার। মা ফিরে পান বুকের মানিক হারানো সন্তান। আর এলিজাবেথ পান তার মাকে। আনন্দে দুজনই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এলিজাবেথ তার মায়ের জন্য নতুন জামা-পায়জামা, কসমেটিক্সসসহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে আসেন। পরে স্থানীয় একটি বাজার থেকে চাল, ডাল, চিনি, দুধ আটা ময়দা সেমাইসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী কিনে দিয়ে যান। আর নরওয়ে থেকে মেয়ে এলিজাবেথ যেন তার মাকে দেখেতে পরেন সেজন্য একটি মোবাইল ফোন কিনে দেবেন বলে জানান। কিন্তু কেউই কারো মুখের ভাষা বুঝতে পারছেন না। কেবলই আবেগ অনুভূতি দিয়ে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এলাকাবাসী জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ জুলাই ঢাকায় ননদের বাসায় শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের পোদ্দারচর গ্রামের মৃত বছির সরদারের স্ত্রী ফিরোজা বেগম এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। নাম রাখেন মৌসুমী। সেই সময় ফিরোজা বেগমের আর্থিক অভাব অনটন ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে মৌসুমীকে মোহাম্মাদপুরের সমাজ কল্যাণ পরিচালককের কাছে দত্তক দেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ৫০ বছর আগের সন্তান হারানো মা ফিরোজা বেগমের কোলে দেখা মিলে নরওয়ে থেকে ছুটে আসা এলিজাবেথ ফিরোজাকে। সম্প্রতি নরওয়ে থেকে শেকড়ের খোঁজে বাংলাদেশে আসেন এলিজাবেথ ফিরোজা। শুরু করেন মাকে খুঁজে পাবার এক অসম্ভব লড়াই। সে লড়াইয়ে সফলতা পান ৫০ বছর পর। এলিজাবেথ এর আগেও ২০১৩ সালে নাড়ির টানে এসেছিলেন বাংলাদেশে।
এলিজাবেথের মা ফিরোজা বেগম জানান, ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালে ওর বাবা মারা যান। তখন আমার মাথার ওপর কোনো ছায়া ছিল না। আত্মীয়স্বজন অনেকের বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। কোনো কূলকিনারা পাই নাই; কিন্তু কোলের মানিক রাস্তায় ফেলে আসি নাই। রেখেছি সরকারের কাছে। বেঁচে থাকলে থাকলে একদিন দেখা পাবই। এক সময় আমার কোলে আসবে এটা বিশ্বাস তো ছিলই। সেই বিশ্বাসই তো আজ ৫০ বছর পর সত্যি ঘটল।
এ ব্যাপারে এলিজাবেথ ফিরোজা জানান, ছোটবেলা থেকে নরওয়েতে বড় হয়েছি। নরওয়ের বাবা-মা নাম রাখেন এলিজাবেথ। বড় হয়ে জানতে পারি আমার জন্ম বাংলাদেশে। মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তারপর থেকেই আমি ফিরাজো নামটাকে আমার নামের সঙ্গে যুক্ত করি। তবে ২২ বছর বয়সে প্রথম সন্তান প্রসবের পর ওই খানকার ডাক্তার আমার হিস্টরি জানতে চান। তখন থেকেই আমি আমার পরিবারকে খুঁজতে চেষ্টা করি। এ ব্যাপারে আমার স্বামী হ্যানরি ও সন্তানরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। সেখানে আমার ৩ ছেলে ও এক মেয়ে এবং নাতি-নাতনি হয়েছে।
বিকালে আবার ঢাকায় ফিরে যান এলিজাবেথ ফিরোজা ও তার স্বামী হ্যানরি।
এম.কে
২৯ মার্চ ২০২৪