ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন শুক্রবার সকালে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রাজপথে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়ে হাজারো মানুষ।
সকালে নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। তরুণদের অংশগ্রহণে মুখরিত ওই বিক্ষোভে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়ছিল, হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড— ‘নেতানিয়াহু একজন যুদ্ধাপরাধী’, ‘ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের সব সহায়তা বন্ধ করো’, ‘নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করো’, ‘গাজায় না খাইয়ে হত্যা বন্ধ করো’।
বিক্ষোভে তখন উল্লাসে ফেটে পড়েন অংশগ্রহণকারীরা, যখন জানা যায়, নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বহু দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একযোগে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন: ‘নেতানিয়াহু, তুমি লুকোতে পারো না — আমরা তোমাকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করছি!’
নেতানিয়াহুর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর সকাল ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে প্রায় ২,০০০ বিক্ষোভকারী টাইমস স্কয়ার থেকে জাতিসংঘ ভবনের দিকে মিছিল শুরু করেন। এতে ৪২তম স্ট্রিট ও সিক্সথ অ্যাভিনিউয়ের একাধিক সড়ক বন্ধ হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের ওপরও। কারণ, তিনি নেতানিয়াহুর ভাষণে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে বহু বিশ্বনেতা বর্জন করেছিলেন অধিবেশন।
ব্রুকলিন থেকে আসা অ্যারন কিরশেনবাউম (২৪) বলেন, ‘নেতানিয়াহুকে নিউইয়র্কে নামার অনুমতি দেওয়া ছিল চূড়ান্ত অন্যায়।’
নভেম্বরের মেয়র নির্বাচনপ্রার্থী ঝোহরান মামদানি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন—নেতানিয়াহু যদি নিউইয়র্কে আসেন, তাহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওয়ারেন্ট অনুযায়ী পুলিশ দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করাবেন।
২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে এ পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ। ইসরায়েল অব্যাহতভাবে গাজা শহরে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, ফলে দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে— নিউইয়র্ক শহরের নিবন্ধিত ভোটারদের মাত্র ২৬ শতাংশ ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, বিপরীতে ৪৪ শতাংশ বেশি সহানুভূতিশীল ফিলিস্তিনিদের প্রতি।
নিউ অরলিন্স থেকে আসা চার্লস হ্যামলিন বলেন, ‘আমি হতাশ, আমেরিকানরা এই সংকট দেখেও উদাসীন। নেতানিয়াহু যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত, তার নিউইয়র্কে আসা উচিত হয়নি।’
সূত্রঃ এপি
এম.কে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫