ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের দামের রেকর্ড পতন হয়েছে। সোমবার এক লাফে ৪ শতাংশ দাম হারায় পাউন্ড। বর্তমানে এক পাউন্ড দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে ১.০৩৫ ডলার। যা ১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পাউন্ডের দাম কমে ডলারের সমান হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খবরে জানানো হয়, শুক্রবার গত ৫০ বছরের মধ্যে সবথেকে বড় ট্যাক্স হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছেন বৃটেনের চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার বা অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারটেং। এরপর থেকেই পাউন্ডের দাম কমতে শুরু করে। চলতি মাসের প্রথম দিন এক মার্কিন ডলারের মান ছিল ০.৮৭ পাউন্ড। রোববার এক মার্কিন ডলারের মান ছিল ০.৯৩ পাউন্ড। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে রেকর্ড মান কমেছে পাউন্ডের।
কনজার্ভেটিভ দলের সাবেক চ্যাঞ্চেলর লর্ড কেন ক্লার্ক অর্থমন্ত্রীর ট্যাক্স হ্রাসের সিদ্ধানের সমালোচনা করেছেন।
যুক্তরাজ্যের জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এই দরপতন যেসব প্রভাব ফেলবে:
১. পাউন্ডের দর পতনে বিদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আমদানিকৃত পণ্য ও পরিষেবার দাম বেড়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলিকে বিদেশ থেকে খাদ্য, কাঁচামাল বা যন্ত্রাংশ কিনতে বেশি খরচ হবে। যুক্তরাজ্যের জীবনযাত্রার ব্যয় এমনিতেই গত ৪০ বছরে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। লাগাতার ভাবে বেড়েছে বিদ্যুৎ বিল।
২. কিছু মর্গেজের রিপেমেন্ট বেড়বে। পাউন্ডের দর পতন মূল্যস্ফীতিকে ঠেলে উঠাবে। এই মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হার বাড়াবে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। ফলে ট্র্যাকার বা ভ্যারিয়েবল রেটে মর্গেজ নেওয়া যুক্তরাজ্যের দুই মিলিয়ন গ্রাহকের মাসিক পেমেন্ট বেড়ে যাবে। ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক লোন বা কার লোনের চার্জও বাড়াতে পারে লেন্ডাররা।
৩. বিদ্যুৎ বিলের উপর নতুন চাপ যুক্ত হবে। যুক্তরাজ্যে যে গ্যাস ব্যবহার হয় তার সবগুলোর দামই ডলারে হিসাব করা হয়- এমনকি যুক্তরাজ্যে উৎপাদিত গ্যাসও। ইউক্রেনের যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাস এবং বিদ্যুতের বিলের ক্রমবর্ধমান মূল্য মোকাবেলায় গৃহস্থালি এবং ব্যবসার জন্য রূপরেখা দিতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে। সেখানে সরবরাহকারীদের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, গ্যাসের পাইকারি মূল্য আগের উচ্চমূল্য থেকে নেমে আসলেও পাউন্ডের মান কমাতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরা চাপের মুখে পড়বে।
৪. রপ্তানিকারকদের বিক্রি বাড়ার মাধ্যমে অর্থনীতি গতি লাভ করবে। পাউন্ডের দাম কমে যাওয়া মানে, বিশ্বজুড়ে ভোক্তারা ব্রিটিশ কারখানায় উৎপাদিত পণ্য আগের থেকে কম দামে পাবে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে।
৫. আন্তর্জাতিক বিয়োনকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিটের পর অতিরিক্ত নিয়মনীতির কবলে পরে যেসব ব্যবসা লড়াই করে চলেছে, তাদের পথ কিছুটা সুগম হবে।
৬. বিদেশ ভ্রমণ ব্যয়বহুল হবে। বিদেশে ছুটি কাটাতে গেলে থাকা-খাওয়ার খরচ বেশি দিতে হবে। এদিকে এয়ারলাইনের বিভিন্ন চার্জ, প্লেনের টিকিট ইত্যাদি বাড়তে দেখা যেতে পারে, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব ডলারে হিসাব করা হয়।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২
এনএইচ