TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ২৪ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর পাচারকৃত ইরানি তেলের ওপর

পাকিস্তান প্রতিদিন ইরান থেকে পাচার হওয়া ৫০ থেকে ৬০ লাখ লিটার তেলের প্রবাহ স্বীকার করেছে। সোমবার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সীমান্তে কড়াকড়ি জোরদারের কারণে এই পাচার আগের তুলনায় কমেছে। একসময় যেখানে প্রতিদিন ১৫–১৬ মিলিয়ন লিটার তেল পাচার হতো, এখন তা নেমে এসেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে।

সরকারি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০২৪ সালের মে মাসে গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া ওই তদন্তে বলা হয়, প্রতিবছর পাকিস্তানে পাচার হয় ইরানের এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি তেল ও ডিজেল। এতে দেশের জ্বালানি চাহিদার ১৪ শতাংশ অবৈধভাবে পূরণ হচ্ছে এবং সরকারি কোষাগারে শত শত মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। পাচারচক্রে ২০০–এর বেশি ব্যবসায়ী ছাড়াও সরকারি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নাম উঠে এসেছে।

পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয় বিপুলসংখ্যক যান ও নৌকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ২,০০০ লরিতে ৩,২০০–৩,৪০০ লিটার করে ডিজেল আসে সীমান্ত দিয়ে। পাশাপাশি প্রায় ১,৩০০ নৌকা প্রতিদিন ১,৬০০–২,০০০ লিটার করে জ্বালানি বহন করে পাকিস্তানে প্রবেশ করছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান বিকল্প বাজার হিসেবে পাকিস্তানকেই বেছে নিয়েছে। স্থানীয় ক্রেতারা রিয়ালে তেল কিনে পরে পাকিস্তানি বাজার থেকে ডলার সরবরাহ করছে।

অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই পাচারের প্রসার ঘটছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং আইএমএফ থেকে নতুন ঋণ পাওয়ার শর্তে জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে পাকিস্তানি বাজারে বৈধ তেলের দাম চড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার হয়তো নীরবে পাচার হওয়া সস্তা ইরানি তেলকে দেশের বাজারে প্রবাহিত হতে দিচ্ছে।

বেলুচিস্তানের লাখ লাখ মানুষ এ পাচারের ওপর নির্ভরশীল। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, বিদ্রোহপ্রবণ এ প্রদেশে প্রায় ২৪ লাখ মানুষের জীবিকা জ্বালানি পাচারের সঙ্গে জড়িত। হঠাৎ করে এ ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে সীমান্তবর্তী দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলো ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয়ে পড়বে বলে সতর্ক করেছে সেনা মুখপাত্র।

একইসঙ্গে আফগান সীমান্তে দুর্বল নজরদারির অভিযোগও তুলেছে পাকিস্তান। চৌধুরী জানান, পাকিস্তান ১,৪৫০টিরও বেশি সীমান্ত পোস্ট স্থাপন করেছে, অথচ তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের পোস্ট সংখ্যা মাত্র ২০০–এর কিছু বেশি। পাচার বা অবৈধ চলাচলের সময় আফগান সীমান্ত থেকে গুলি ছোড়া বা সহযোগিতা করার মতো কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

পাকিস্তানের অভিযোগ, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তান থেকে আশ্রয় নিয়ে সীমান্তে হামলা চালাচ্ছে। তবে তালেবান কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ সবসময় অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, আফগান মাটিতে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় নেই এবং প্রতিবেশী দেশকে হুমকি দেওয়ার অনুমতি তারা দেয় না।

সূত্রঃ ভয়েস অব আমেরিকা

এম.কে
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

হার্ভার্ডে ভর্তি হতে না পারার অপমানেই কি ট্রাম্পের প্রতিশোধ?

ট্রাম্পের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-মুক্ত মর্যাদা প্রত্যাহারের হুমকি

ছাড় পেলো না ভারত, অতিরিক্ত শুল্ক আদায়ের ঘোষণা ট্রাম্পের