ব্রিটেন ১৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ শীত মৌসুম অতিবাহিত করছে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ঝড় হেনকের পরে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে, এক হাজারেরও বেশি প্রপার্টি প্লাবিত হয়েছে এবং দেশজুড়ে নদীর তীর ফেটে পানি বেরিয়ে এসেছে।
সেপ্টেম্বরের পর থেকে, আটটি বড় ঝড় হয়েছে – মেট অফিস থেকে জানানো হয়েছে এক মৌসুমে এটি সর্বাধিক সংখ্যা। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সময়কালটি ১৮৯০ সালের রেকর্ডকে প্রায় ছাড়িয়ে গিয়েছে।
রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইড্রোলজিস্ট অধ্যাপক হান্না ক্লোক বলেছেন, ঝড়গুলি দেশকে একটি ভেজা স্পঞ্জে পরিনত করেছে।
মেট অফিস জানিয়েছে, ঝড় হেনক ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস জুড়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত বয়ে নিয়ে আসে। অনেক অংশে ৪০ মিমি এরও বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে।
পরিবেশ সংস্থার ডেটা দেখায় বিভিন্ন নদীর পানি ব্যতিক্রমীভাবে সর্বোচ্চ প্রবাহ ও উচ্চতর স্তরে রয়েছে। যা সাধারণত পরিলক্ষিত হয় না।
জলাবদ্ধতার কারণে ফসল পচে যাচ্ছে যার কারণে কৃষকেরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলো বিরাট চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ের জন্য ১৫৫ মিলিয়ন পাউন্ড এবং ক্ষতিগ্রস্থ যানবাহনের জন্য ৫৩ মিলিয়ন পাউন্ড ইন্সুরেন্স ক্লেইম করা হয়েছে বলে খবরে জানা যায়।
বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আবহাওয়ার চরম অসহিষ্ণু আচরণের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের বাড়ির মালিকরা ইন্সুরেন্স প্রিমিয়ামের উর্ধমূখীতার মুখোমুখি হতে পারেন।
জাতীয় কৃষক ইউনিয়ন (এনএফইউ) ইতোমধ্যে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে এবং সরকারকে বন্যা প্রতিরক্ষায় পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মার্টিন লুকাস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে অপ্রত্যাশিতভাবে। চরম বৃষ্টিপাতের ফলে আগামী বছরগুলিতে বন্যা আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লেবার পার্টি সরকারকে দোষারোপ করে বলে, “সরকার ঘুমের ঘোরে আছে বলে কোনো ব্যবস্থাপনাই যথাযথ নয়। যখন বন্যার সতর্কতা সংকেত পেয়েছিল সে অনুযায়ী সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।ভয়াল এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের টাস্কফোর্স গঠন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল।”
অ্যাক্সা ইউকে-র প্রধান অ্যাডাম হল্যান্ড জানান, “গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়ার ঘটনাগুলি যুক্তরাজ্য জুড়ে আরও ঘন ঘন এবং মারাত্মক হয়ে উঠবে। যার ফলে এই সম্পর্কিত ব্যবস্থা নেয়ার দিকে এখনই নজর দিতে হবে। নতুবা যুক্তরাজ্য জোরে বিধ্বস্ত অবস্থা মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।”
উল্লেখ্য যে, অ্যাক্সা দ্বারা পরিচালিত গবেষণায় দেখা গিয়েছে বন্যা বা চরম আবহাওয়ার জন্য সংবেদনশীল অঞ্চলে বসবাস করে ৩৮ শতাংশ মানুষ। যাদের মধ্যে ২৪ শতাংশ লোকও বর্তমানে হোম ইন্সুরেন্স দ্বারা সুরক্ষিত নয়।
এম.কে
০৭ জানুয়ারি ২০২৪